
ত্রিপুরা বিধানসভার চলতি অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে আসে। বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়ের আনীত তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের উন্নত সুবিধা প্রদানের জন্য বদ্ধপরিকর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।অর্থমন্ত্রী জানান, রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভিশন ডকুমেন্ট অনুযায়ী কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.২৫, যা বাড়িয়ে ২.৫৭ করা হয়েছে। এর ফলে কর্মচারীদের বেসিক পে ১৪.২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।তিনি একটি উদাহরণ টেনে বলেন, যদি কারও বেসিক পে ১০০০ টাকা হয়, তবে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৫ অনুযায়ী তা দাঁড়ায় ২২৫০ টাকা। কিন্তু নতুন হারে ২.৫৭ হলে সেই বেতন দাঁড়াবে ২৫৭০ টাকা। অর্থাৎ ১৪.২২ শতাংশ বেসিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মচারীরা প্রতিবার ডিএ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছেন।প্রণজিৎ সিংহ রায় উল্লেখ করেন, দেশের অনেক রাজ্যে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের জন্য ডিএ ঘোষণা বন্ধ ছিল। কিন্তু ত্রিপুরা সরকার সেই কঠিন সময়েও কর্মচারীদের জন্য ডিএ এবং অবসরপ্রাপ্তদের জন্য ডিআর ঘোষণা করেছিল। সরকার ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ডিএ প্রদানের ব্যবধান কমিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।করোনা মহামারির সময় কর্মচারীদের আর্থিক স্বস্তি দিতে ‘ক্যাশ ইন লিউ অফ এফটিসি’ চালু করেছিল রাজ্য সরকার। এর মাধ্যমে কর্মচারীরা কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে উপকৃত হন বলে জানান অর্থমন্ত্রী।পূর্ববর্তী সরকারের আমলে একাধিক পদে দীর্ঘদিন কাজ করেও অনেক ফিক্সড পে কর্মচারী নিয়মিতকরণের সুবিধা পাননি। অনেকে ৮ থেকে ১০ বছর চাকরি করেও ফিক্সড পে অবস্থায় ছিলেন। বর্তমান সরকার সেই নীতি সংশোধন করেছে। এখন থেকে একজন কর্মচারী একাধিক পদ মিলিয়ে পাঁচ বছর একটানা চাকরি সম্পূর্ণ করলে তিনি নিয়মিতকরণের যোগ্য হবেন।কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকার ‘অ্যাডহক প্রমোশন পলিসি’ চালু করেছে। ইতিমধ্যে বিপুল সংখ্যক কর্মচারী এই সুবিধা পেয়েছেন। তবে সরকার চেষ্টা করছে, যাতে নিয়মিত প্রমোশনের প্রক্রিয়াটিও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে চালু করা যায়। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধান আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।সরকারি কর্মচারীরা যাতে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সুবিধা পান, তার জন্যও একটি বিশেষ নীতি তৈরি করা হচ্ছে। এতে কর্মচারীরা সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা খাতে উপকৃত হবেন।রাজ্য সরকার ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর) জওয়ানদের অবসরের বয়স ৫৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬০ বছর করেছে। পাশাপাশি, টিএসআর ও পুলিশের জন্য রেশন মানি এবং ড্রেস অ্যালাউন্সও বৃদ্ধি করা হয়েছে।অর্থমন্ত্রী জানান, হোমগার্ডদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে তাদের মাসিক পেনশন তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে যেখানে ৭৫০ টাকা দেওয়া হত, বর্তমানে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫০০ টাকা।সরকারি কর্মচারীদের উৎসবকালীন সহায়তা বাড়াতে ফেস্টিভ্যাল অ্যাডভান্স ৫০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০,০০০ টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ফেস্টিভ্যাল গ্রান্টও ২০১৮ সালের তুলনায় তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে উৎসবের মরসুমে কর্মচারীরা অনেক বেশি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন।অর্থমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট করে বলেন, সরকারি কর্মচারীরা যাতে আরও ভালো সুবিধা পান, তার জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। করোনার মতো কঠিন সময়েও কর্মচারী এবং অবসরপ্রাপ্তদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। আগামী দিনেও সরকার তাদের দাবি-দাওয়া বিবেচনা করে যথাসম্ভব পদক্ষেপ নেবে।ত্রিপুরা সরকারের এই পদক্ষেপগুলো প্রমাণ করে, সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষাকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ডিএ প্রদানের ব্যবধান কমানো থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসুরক্ষা, পেনশন, ফিক্সড পে কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ এবং উৎসবকালীন সহায়তা — সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক দিকনির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে।বিধানসভায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার, সরকারি কর্মচারীদের উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করাই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।