ত্রিপুরায় সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্থবিরতা, শিক্ষাক্ষেত্রের অব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ।
আগরতলায় কংগ্রেসের আয়োজিত গণঅবস্থানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি রাজ্য ও কেন্দ্র—উভয় স্তরের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আনেন।
বিধায়কের অভিযোগ, রাজ্যে চাকরির নামে প্রতারণা চলছে। তিনি বলেন,
“চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। হাজার হাজার পদ খালি থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে। একটি পরীক্ষার ফল প্রকাশে তিন থেকে চার বছর কেটে যায়, ততদিনে নতুন পদ সৃষ্টিও নিষ্ফল হয়ে পড়ে।”
সুদীপবাবু দাবি করেন, নিয়োগে দুর্নীতি এখন প্রকাশ্য গোপন বিষয়। স্বাস্থ্য দপ্তরের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে যুব কংগ্রেস দু’বার লিখিত প্রমাণ দিলেও, প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ—বা অনিচ্ছুক।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি বলেন,
“সরকার তিন-তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে যাচ্ছে, অথচ সরকারি শিক্ষার মান অবনতির দিকে। এখানে উদ্দেশ্য শিক্ষার উন্নয়ন নয়—কমিশন আদায়।”
উদাহরণ হিসেবে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান,
“প্রথম বর্ষেই অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে। কারণ শিক্ষক নেই, পরিকাঠামো নেই, অথচ অনুমোদন মিলেছে টাকার জোরে।”
রাজ্যে স্কুল বন্ধের প্রবণতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন কংগ্রেস বিধায়ক।
“আজ ৩৪০টি স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক আছেন। মানসম্মত শিক্ষা ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে,”
বলেন তিনি।
আগরতলাকে ‘স্মার্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকেও তিনি কটাক্ষ করে বলেন,
“প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও, বৃষ্টির জলেই আগরতলা আজও ডুবে যায়। উন্নয়নের নামে চলছে কমিশনের খেলা।”
রাজ্যের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও মাদক ব্যবসা নিয়েও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন সুদীপ রায় বর্মণ।
তিনি বলেন, “সরকারি চাকরি বন্ধ, বেসরকারি বিনিয়োগ নেই—তরুণরা বাধ্য হয়ে অন্য রাজ্যে কাজের খোঁজে যাচ্ছেন। অন্যদিকে মাদক ব্যবসা বেড়ে সমাজের নৈতিক ভিত্তি ধ্বংস হচ্ছে।”
বক্তৃতায় জাতীয় রাজনীতিকেও আক্রমণ করেন তিনি।
“বিজেপি সরকার দেশের ইতিহাস বিকৃত করছে—স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের অবদান মুছে দিয়ে আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার ভূমিকা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে,”
অভিযোগ তাঁর।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন,
“১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় কংগ্রেস নেতারা আন্দোলনে যোগ দিতে সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, অথচ তখন হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগ একসঙ্গে প্রাদেশিক সরকার চালাতো। আজ সেই ইতিহাস উল্টে দেওয়া হচ্ছে।”
সুদীপ রায় বর্মণ বলেন,
“কংগ্রেস বিভাজনের নয়, ঐক্যের রাজনীতি করে। জনগণ যদি চুপ থাকে, তবে অন্যায়ের অংশীদার হবে। এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্নীতি ও অব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।”
তিনি শেষে আহ্বান জানান—
“রাজ্যের মেধা, সততা আর পরিশ্রম যেন আবার মূল্যায়িত হয়। গণআন্দোলনের মাধ্যমেই ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনতে হবে।”
বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের বক্তব্যে ত্রিপুরার প্রশাসনিক ব্যর্থতা, শিক্ষাক্ষেত্রের অবক্ষয়, এবং জাতীয় রাজনীতিতে ইতিহাস বিকৃতির প্রবণতা—সব মিলিয়ে এক গভীর উদ্বেগের চিত্র ফুটে উঠেছে।