ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। রাজ্যের নাগরিকদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকে লক্ষ্য রেখে রাজ্য সরকার এবং স্বাস্থ্য দপ্তর অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক, দ্রুত এবং সুলভ চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই রাজ্যে একের পর এক নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার আগরতলার জিবিপি হাসপাতালে একাধিক আধুনিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা।এইদিন কার্ল ল্যান্ডস্টেনার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জিবিপি হাসপাতালের নতুন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লক (CCB), সংক্রামক রোগ কেন্দ্র (CDC) এবং ২০ শয্যা বিশিষ্ট বিশেষ ওয়ার্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পাশাপাশি, এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতালের সঙ্গে দিল্লির এইমস (AIIMS) এবং লক্ষ্ণৌয়ের এজিপিজিআই (SGPGI) হাসপাতালের মধ্যে ডিজিটাল টেলিমেডিসিন পরিষেবার সূচনা করেন তিনি।
এছাড়াও, রোগী ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে ইন্টারডিপার্টমেন্টাল রেফারেল সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যা রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আরও সমন্বয় ও গতি আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য অবকাঠামোর আধুনিকীকরণে নতুন দিশা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জিবিপি হাসপাতাল বহু বছর ধরে রাজ্যের মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। কিন্তু আজকের জিবিপি অতীতের চেয়ে অনেক উন্নত, আধুনিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর। রাজ্য সরকার অবিরামভাবে চেষ্টা করছে যাতে প্রতিটি নাগরিক ঘরের কাছেই উন্নত চিকিৎসা পান।”তিনি আরও জানান, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটছে।
আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সংযোজন থেকে শুরু করে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক নিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশের স্বনামধন্য হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সঙ্গে সহযোগিতা করে আমরা রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করছি। রাজ্যের মানুষ যাতে জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য বাইরের রাজ্যে যেতে না হয়, সেই লক্ষ্যেই রাজ্য সরকার একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।”—টেলিমেডিসিন পরিষেবা: স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রয়োগ মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, “আজকের দিনে প্রযুক্তি ছাড়া উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা কল্পনা করা যায় না।
টেলিমেডিসিন পরিষেবার মাধ্যমে রাজ্যের মানুষ এখন দেশের সেরা চিকিৎসকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলতে পারবেন।”তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই পরিষেবার মাধ্যমে চিকিৎসা আরও সহজলভ্য ও কার্যকর হবে। রোগীরা চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করতে পারলে চিকিৎসা প্রদান আরও ফলপ্রসূ হবে।তিনি চিকিৎসক সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ডাক্তারি পেশা একটি নিরন্তর শিক্ষার ক্ষেত্র। নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ও গবেষণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এতে যেমন চিকিৎসার মান বৃদ্ধি পাবে, তেমনি রোগীর আস্থাও অর্জন করা সম্ভব হবে।”—চিকিৎসা শিক্ষায় অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে মোট ৪০০টি এমবিবিএস সিট রয়েছে—যা রাজ্যের জন্য গর্বের বিষয়।
তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, এবছর এজিএমসি ছাড়া অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। এর কারণ অনুসন্ধান করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।তিনি আরও বলেন, “আমাদের রাজ্যের চিকিৎসক ও কর্মীদের মেধা ও দক্ষতা কোনোভাবেই কম নয়। এখন রাজ্যের চিকিৎসকরাই জটিল অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করছেন—গ্যাস্ট্রো সার্জারি, হাঁটু প্রতিস্থাপন, হিপ রিপ্লেসমেন্ট, কার্ডিও সার্জারি, ব্রঙ্কোস্কোপি ও রেনাল সার্জারির মতো চিকিৎসা এখন এখানেই হচ্ছে। এটি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতার বড় প্রমাণ।”
নতুন প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা**মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও বিস্তারিত কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, জিবিপি-তে ইতিমধ্যে সুপার স্পেশালিটি ব্লক চালু করা হয়েছে।তাছাড়া, এজিএমসি-জিবিপি হাসপাতালে মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।রাজ্যে শীঘ্রই একটি টার্শিয়ারি আই কেয়ার হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা রাজ্যের চক্ষু চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে ভারতমাতা ক্যান্টিন ও রোগী পরিবারের জন্য নাইট শেল্টার নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে—যাতে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীর আত্মীয়রা স্বল্প খরচে আশ্রয় ও খাবার পেতে পারেন।
এছাড়াও আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতালের রোগী সহকারীরা এখন মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে দুপুরের খাবার পাচ্ছেন।মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা সফলভাবে চলছে, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন। পাশাপাশি, বিশ্রামগঞ্জে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র স্থাপনেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের চিকিৎসা খাতে নতুন মাইলফলক**অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে। তিনি বলেন, “আজ ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। জিবিপি হাসপাতালের উন্নয়ন এবং টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালুর মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্য খাতে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো।”ত্রিপুরা ওএনজিসির অ্যাসেট ম্যানেজার সঞ্জীব কুমার জানজুয়া, পিপিজিএস-এর সিইও ও মেম্বার সেক্রেটারি প্রসাদা রাও তাঁদের বক্তব্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রফেসর (ডা.) সঞ্জিব দেববর্মা।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—মেডিক্যাল এডুকেশন দপ্তরের অধিকর্তা প্রফেসর (ডা.) এইচ. পি. শর্মা, জিবিপি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার (ডা.) শঙ্কর চক্রবর্তী, এজিএমসি-র অধ্যক্ষ প্রফেসর (ডা.) অনুপ কুমার সাহা এবং আরও বহু বিশিষ্ট চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আজ স্বাস্থ্য সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।