
সৌরশক্তিতে এগোচ্ছে ত্রিপুরা। হতে পারে মডেল রাজ্য
রাজ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূলভিত্তি এতদিন গ্যাস হলেও সেই সম্পদ সীমিত। তাই ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ সংকট কাটাতে সৌরশক্তির বিকল্প ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ দপ্তর নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ডুম্বুর জলবিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরুজ্জীবিত করার, যার লক্ষ্য ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন।
রবিবার উনকোটি জেলার কৈলাশহরে “প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর মুক্ত বিদ্যুৎ যোজনা” উপলক্ষে এক সচেতনতামূলক শিবিরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ এ কথা জানান।
মন্ত্রী নাথ জানান, ডুম্বুর প্রকল্পে আগে প্রায় ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হত। কিন্তু গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে সেখানে পুনর্গঠন চলছে এবং লক্ষ্য রাখা হয়েছে ১১ মেগাওয়াট উৎপাদনের।
তিনি বলেন, “আমাদের রাজ্যে বিদ্যুৎ মূলত গ্যাস নির্ভর। কিন্তু গ্যাস একদিন শেষ হয়ে যাবে। তাই বিকল্প শক্তির উৎসের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।”
গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির কারণে রুখিয়া, পালাটানা, রামচন্দ্রনগর ও মনারচক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে সূচনা হয় “প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর মুক্ত বিদ্যুৎ যোজনা”-র। এই প্রকল্পের আওতায় বাড়ির ছাদ, সমতল জমি বা যেকোনো খোলা জায়গায় সৌরপ্যানেল বসানো যাবে। এর ফলে পরিবারগুলি নিজেদের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে, বিদ্যুৎ বিল কমবে এবং অতিরিক্ত উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয়ও সম্ভব হবে।
মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি পরিবার সৌরশক্তির সুবিধা নিক। এটি কেবল বিল কমানোর সুযোগ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও উপায়।
মন্ত্রী জানান, কৈলাশহরে এপ্রিল মাসে ৪০% গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলেও ৬১% গ্রাহক দেননি। বর্তমানে মাত্র ৪৬.১% গ্রাহক বিল জমা দিচ্ছেন। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখনও বিদ্যুৎ বিল দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সাশ্রয়ের জন্য বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, আর গ্রাহকরা যদি বিলই না দেন, তবে সমস্যা বাড়বে।
রাজ্যজুড়ে চলছে সচেতনতা শিবির। মন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই সর্বত্র সৌরপ্যানেল স্থাপন করা হোক। এটি শুধু সরকারের প্রকল্প নয়, বরং জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে আমাদের রাজ্য বিদ্যুৎ ঘাটতির মুখোমুখি হবে না।”
বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ১০ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার পরিবারে সৌর প্যানেল বসানোর লক্ষ্য নিয়েছে বিদ্যুৎ দপ্তর। এই প্রকল্প সফল হলে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।
শিবিরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, “মানুষ যে কোনো রাজনৈতিক দলে থাকতে পারেন, কিন্তু উন্নয়ন সবার জন্য হওয়া উচিত। শক্তি সংকট মোকাবিলা করতে আমাদের একসাথে এগোতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক বিরজিত সিনহা, গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান লক্ষ্মী নমঃ, ভাইস-চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান, পৌর পরিষদের চেয়ারপার্সন চোপলা দেবরয়, সহ-চেয়ারম্যান নিতীশ দে এবং বিদ্যুৎ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ বসু সহ আরও অনেকে।
তাঁরা সবাই সৌরশক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সাধারণ মানুষকে এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
ত্রিপুরার বিদ্যুৎ দপ্তরের মতে, গ্যাসের ভাণ্ডার সীমিত হওয়ায় আগামী দিনে রাজ্যের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সৌরশক্তি সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং জনসচেতনতা থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যেই রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশ সৌরশক্তি থেকে আসবে।
রাজ্য সরকারের লক্ষ্য শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো নয়, বরং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে সবুজ রাজ্য গড়ে তোলা।
👉 আরও ভিডিও ও লাইভ আপডেট দেখতে ভিজিট করুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেল: Tripura News YouTube