
ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঠেকাতে পুজোয় ছুটি বাতিল কর্মীদের কড়া বার্তা রতন লাল নাথের
দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও অব্যবস্থাপনার জেরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছিল বিশালগড় ও চরিলাম এলাকায়। অবশেষে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। শুক্রবার বিকেলে বিশালগড় পঞ্চায়েত সমিতির হলে অনুষ্ঠিত হলো এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ, স্থানীয় বিধায়ক, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা।
বহু মাস ধরেই বিশালগড় ও চরিলামের সাধারণ মানুষ বিদ্যুতের অনিয়মিত পরিষেবার অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, ট্রান্সফরমারের বিকল হওয়া, কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকা—এমন পরিস্থিতিতে জনজীবন প্রভাবিত হচ্ছিল প্রতিদিন। এমনকি কিছুদিন আগে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা বিশালগড়-জাঙ্গালিয়া-উদয়পুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই সক্রিয় হন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ।
শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সুশান্ত দেব, বিশালগড় ও চরিলাম মণ্ডলের সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপারসন সহ প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার আধিকারিকরা। আলোচনায় উঠে আসে দুই বিধানসভা এলাকার বিদ্যুত্ সরবরাহের বর্তমান চিত্র, সমস্যার মূল কারণ এবং সম্ভাব্য সমাধানের উপায়।
মন্ত্রী রতন লাল নাথ বৈঠকে স্পষ্টভাবে জানান যে, সাধারণ মানুষের অসুবিধা দূর করাই তাঁর প্রধান অগ্রাধিকার। তিনি আশ্বাস দেন, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষত জীর্ণ ও অচল অবস্থায় পড়ে থাকা একাধিক ট্রান্সফরমার মেরামত ও প্রতিস্থাপনের কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে।
বৈঠকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা ছিল বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের পুজোর ছুটি বাতিল। মন্ত্রী জানান, উৎসবের সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা বাড়বে বহুগুণ। তাই সরকারি কর্মীরা পুজোর সময়েও কাজে যুক্ত থাকবেন, যাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
মন্ত্রী আরও ঘোষণা করেন যে, বিশালগড়ের গোকুলনগরে একটি নতুন বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন চালু করা হবে। এই প্রকল্পের উদ্বোধন হবে পুজোর আগেই। তাঁর দাবি, নতুন সাব-স্টেশন চালু হলে এলাকার বিদ্যুৎ চাপ কিছুটা কমবে এবং পরিষেবা উন্নত হবে।
সভায় বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিক বিদ্যুৎ সংক্রান্ত নানান সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কোথাও ট্রান্সফরমারের ক্ষমতা কম হওয়ায় ভোল্টেজ ওঠানামা করছে, কোথাও আবার দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না হওয়ায় যন্ত্রপাতি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।
মন্ত্রী রতন লাল নাথ সমস্ত বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রকল্পগুলির তদারকি করবেন। প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ এখন আশায় বুক বাঁধছেন। স্থানীয়দের দাবি, সরকারি আশ্বাস কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে কার্যকর হোক। উৎসবের সময় যদি সঠিকভাবে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তবে সেটা হবে সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।
রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রীর হঠাৎ বৈঠককে অনেকেই রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। স্থানীয়দের ক্ষোভ যে প্রশাসনের কানে পৌঁছেছে, তা এই বৈঠকের মাধ্যমেই স্পষ্ট হয়ে গেল।
শুক্রবারের বৈঠক ঘিরে বিশালগড়-চরিলাম এলাকায় এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে স্থানীয় সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে সরকার যে সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, সেই বার্তা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে মানুষের কাছে।