
স্বাধীনতা দিবসের আগে বড় সন্ত্রাসী হামলার ছক ভেস্তে দিল ত্রিপুরা পুলিশ
ত্রিপুরা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাজ্যে বড়সড় সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়েছে। অসম থেকে সক্রিয় উগ্রপন্থী সংগঠন ত্রিপুরা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট (TUNF) উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর মহকুমায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহার করে নাশকতার ছক কষেছিল। এই হামলার মাধ্যমে রাজ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি ও শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আগেই গোপন সূত্রে খবর আসে যে TUNF-এর এক দল সদস্য স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানকে লক্ষ্য করে কাঞ্চনপুরে প্রবেশ করছে। এই তথ্য পাওয়ার পর ভাংমুন থানার পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিকল্পনা করে। কাঞ্চনপুর-ভাংমুন সড়কে একাধিক জায়গায় নজরদারি বসানো হয়, যাতে সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়।
অবশেষে ভাংমুন ইডেন লজের সামনে থেকে পুলিশ দুই সন্দেহভাজনকে আটক করে। ধৃতদের নাম ধনঞ্জয় রিয়াং ও সদানন্দ রিয়াং, যারা পুলিশি তথ্যানুসারে ত্রিপুরা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্টের সক্রিয় সদস্য। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পদার্থ, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়, যা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত ছিল।
গ্রেফতারের পর তাদের ভাংমুন থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উত্তর ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার অভিনেশ রাই (IPS) জানান, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন ও অন্যান্য সামগ্রী ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এই হামলার পরিকল্পনায় আরও কিছু সদস্য জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ বর্তমানে সম্ভাব্য সহযোগীদের খুঁজে বের করতে একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে।
স্বাধীনতা দিবসের আগে এই ধরনের নাশকতার চেষ্টা ধরা পড়ায় গোটা রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে। বিশেষত সীমান্তবর্তী এলাকা, সরকারি অনুষ্ঠানস্থল ও জনবহুল অঞ্চলে পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
অভিনেশ রাই বলেন—
“আমরা সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে রাজ্যের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকে। যে কোনও মূল্যে এই ধরনের নাশকতার প্রচেষ্টা রোখা হবে।”
পুলিশ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি বা বস্তু দেখলে দ্রুত স্থানীয় থানায় খবর দেওয়ার অনুরোধ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাফল্য নয়, বরং গোটা সমাজের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ।
এই ঘটনাটি প্রমাণ করল, তথ্যভিত্তিক গোয়েন্দা কার্যক্রম ও দ্রুত পদক্ষেপ রাজ্যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কতটা কার্যকর হতে পারে। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ত্রিপুরা পুলিশ শুধু নাশকতা প্রতিহত করল না, একই সঙ্গে জনগণের আস্থাও আরও দৃঢ় করল।