
ত্রিপুরায় আসছে নতুন আয়কর আইন ২০২৫! কী বদলাবে আপনার ট্যাক্স ফাইলিংয়ে?
আয়কর বিভাগ নর্থ ইস্ট রিজিয়নের উদ্যোগে মঙ্গলবার শিলংয়ের আয়কর ভবনে অনুষ্ঠিত হলো এক বিশেষ আউটরিচ প্রোগ্রাম— “নতুন আয়কর আইন, ২০২৫ এর দিকে এগিয়ে যাওয়া”। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিফ কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স, শিলং নিনগ্রেইরুম লংবাহ, জয়েন্ট কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স, যুরহাট সন্দীপ মন্ডল সহ আয়কর দপ্তরের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। পাশাপাশি, আয়কর দাতা, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররাও উপস্থিত ছিলেন এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়।
১৯৬১ সালের ইনকাম ট্যাক্স আইন দীর্ঘদিন ধরে দেশের আয়কর ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল। অর্থনীতির কাঠামো যেমন পাল্টেছে, তেমনি বদলেছে প্রযুক্তি, ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং নাগরিকদের প্রয়োজন। এই দীর্ঘ সময়ে আয়কর আইনটিকে অনেকবার সংশোধন করা হলেও, সেটি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছিল। তাই প্রায় ছয় দশক পর পুরনো আইনের অবসান ঘটিয়ে কার্যকর হতে চলেছে নতুন আয়কর আইন ২০২৫।
নতুন আইনকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যাতে তা করদাতাদের জন্য সহজবোধ্য হয় এবং একইসাথে আয়কর দপ্তরের কাজকর্মেও স্বচ্ছতা আসে। আইনটির ভাষা সহজ করা হয়েছে, ধারা ও অধ্যায়ের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে, এবং কাঠামোগত সূচি, সহায়ক টেবিল ও সূত্র যোগ করা হয়েছে যেন করদাতারা সহজেই নিয়ম বুঝতে ও প্রয়োগ করতে পারেন।
চিফ কমিশনার নিনগ্রেইরুম লংবাহ অনুষ্ঠানে বলেন—
“করদাতারা যদি আইনকে সহজে বুঝতে পারেন, তাহলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা কর দানে আগ্রহী হবেন। নতুন আয়কর আইন সেই প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করে তুলবে।”
নতুন আয়কর আইন, ২০২৫ এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো কর বছরের ধারণা। এতদিন পর্যন্ত “পূর্ববর্তী বছর” ও “মূল্যায়ন বছর” নামে দুটি আলাদা ধারণা চালু ছিল। অর্থাৎ, যে অর্থবছরে আয় অর্জিত হয় তাকে বলা হতো পূর্ববর্তী বছর, আর সেই আয়ের উপর কর আরোপ হতো পরবর্তী মূল্যায়ন বছরে।
নতুন আইনে এই জটিলতা দূর করা হয়েছে। এখন থেকে সরাসরি ১লা এপ্রিল থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত সময়কে কর বছর হিসেবে ধরা হবে। অর্থাৎ আয় যে বছরে হয়েছে, সেই বছরেই তার হিসাব মেলাতে হবে। এই পরিবর্তন কর ব্যবস্থাকে অনেক বেশি সরল ও সময়োপযোগী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইনটির আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর ভাষা। আইন প্রণেতারা চেষ্টা করেছেন যাতে এটি কেবলমাত্র আইনজীবী বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের জন্য সীমাবদ্ধ না থেকে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন। আইনটির গঠন এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার সঙ্গে সহজে সমন্বয় করা যায়। ডিজিটাল কর দাখিল ও প্রসেসিং প্রক্রিয়াতেও নতুন আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জয়েন্ট কমিশনার সন্দীপ মন্ডল বলেন—
“আজকের দিনে তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া আয়কর প্রশাসন কল্পনা করা যায় না। নতুন আইন ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে। করদাতাদের জীবন অনেক সহজ হবে।”
নতুন আইনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হলেও, এর কাঠামো অনেক বেশি ব্যবহারবান্ধব। করদাতাদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলি হলো—
কম ধারা ও অধ্যায় → আইনকে দ্রুত বোঝা যাবে।
সহায়ক টেবিল ও সূত্র → হিসাব নির্ধারণ সহজ হবে।
একই কর বছর → দ্বৈত ধারণার বিভ্রান্তি দূর হবে।
স্পষ্ট ভাষা ও সহজ বিন্যাস → সাধারণ মানুষের কাছে আইন বোধগম্য হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন আয়কর আইন কার্যকর হলে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বাড়বে এবং কর দানের হারও বাড়তে পারে। দীর্ঘদিন ধরে জটিল নিয়মকানুনের কারণে অনেক সময় করদাতারা অনীহা প্রকাশ করতেন বা ভুল বোঝাবুঝি হত। সরলীকরণ সেই বাধা দূর করবে।
একজন করদাতা অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন—
“অনেক সময় পুরনো আইন বুঝতে গিয়ে সমস্যা হতো। এখন যদি নতুন আইন সত্যিই সহজ হয়, তাহলে সময় ও খরচ দুটোই কমবে।”
যদিও আইনটি নতুন, তবে বিদ্যমান কর নীতিগুলি মূলত অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এর ফলে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং করদাতাদের হঠাৎ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে হবে না। বরং ধীরে ধীরে সরল কাঠামোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ হবে।
এই আউটরিচ প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল করদাতাদের সচেতন করা এবং নতুন আইন নিয়ে আলোচনা শুরু করা। আয়কর বিভাগ জানিয়েছে, আগামী দিনে আরও কর্মশালা, সেমিনার ও প্রচারমূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হবে যাতে সবার কাছে নতুন আইনের বার্তা পৌঁছায়।
নতুন আয়কর আইন ২০২৫ শুধু একটি আইন পরিবর্তন নয়, এটি কর ব্যবস্থার আধুনিকায়নের এক নতুন অধ্যায়। করদাতা ও প্রশাসনের মধ্যে আস্থার সেতুবন্ধন তৈরি করতে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সরলীকরণ, স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই আইন ভারতীয় অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।