ত্রিপুরা রাজনীতিতে বিস্ফোরণ! মন্ত্রী সুধাংশু দাসের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি চিঠি
ত্রিপুরা রাজ্য রাজনীতিতে ফের চাঞ্চল্য। প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের বিষয় স্বীকার করার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি চিঠি দিয়ে মন্ত্রী সুধাংশু দাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা।
বুধবার সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে আশীষ সাহা জানান, রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য সুধাংশু দাস নিজেই এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে তিনি “নানা সোর্স” থেকে অর্থ গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরাও একইভাবে টাকা নিয়ে থাকেন। যদিও মন্ত্রী দাস এটিকে “ঘুষ” বলতে নারাজ, বরং “প্রণামী” বা “নৈবেদ্য” বলেই ব্যাখ্যা করেছেন।
আশীষ সাহার অভিযোগ, “প্রণামী নাম দিলেই সেটা বৈধ হয়ে যায় না। আইন অনুযায়ী এটি স্পষ্টত দুর্নীতি, এবং একটি গুরুতর অপরাধ।” তিনি আরও বলেন, “এমন স্বীকারোক্তির পরও রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে তাঁরই মন্ত্রিসভার একজন সদস্য নিজেই দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছেন। তবুও সরকার চুপ রয়েছে। আশীষ সাহা লিখেছেন, “এটা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, সংবিধানের পবিত্রতার উপরও আঘাত।”
চিঠিতে আরও দাবি করা হয়েছে যে, মন্ত্রী সুধাংশু দাস ও তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থার অস্বাভাবিক উন্নতি হয়েছে গত কয়েক বছরে। তিনি বলেন, “২০১৮ সালের আগে দাস পরিবার বিপিএল তালিকাভুক্ত ছিল। অথচ পাঁচ বছরের মধ্যে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছেন তাঁরা। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ও তাঁর পরিবারের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের খবর পাওয়া যাচ্ছে।”
আশীষ সাহার অভিযোগ, এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরও কেন্দ্রীয় বা রাজ্য কোনও তদন্ত সংস্থা—ইডি, আইটি, বা সিবিআই—কোনও উদ্যোগ নেয়নি। “বিজেপি এখন একটা ‘ওয়াশিং মেশিন’ দলে পরিণত হয়েছে,” কটাক্ষ করে বলেন তিনি।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে আশীষ সাহা লিখেছেন, “এই গুরুতর আর্থিক অপরাধের বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন। সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে সুধাংশু দাসকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করে আইনি তদন্ত শুরু করা হোক।”
এছাড়া তিনি অন্যান্য মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তাঁর দাবি, শুধু সুধাংশু দাস নয়, আরও কয়েকজন মন্ত্রীর সম্পত্তি স্বল্প সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সেই কারণেও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
“যদি এখনই সরকার ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে মানুষের সংবিধান ও প্রশাসনের উপর অবশিষ্ট সামান্য বিশ্বাসটুকুও হারিয়ে যাবে,”— সতর্কবার্তা দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করছে। কংগ্রেসের একাধিক নেতা বলেন, “একজন মন্ত্রী নিজেই যদি ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন, তাহলে সেটি সরকারের ভাবমূর্তিতে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে।”
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতারাও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তাঁদের দাবি, “ত্রিপুরায় দুর্নীতির রাজনীতি এখন প্রকাশ্য। বিজেপি সরকার নিজেদের স্বজনপোষণে ব্যস্ত।”
তবে শাসকদলের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মন্ত্রী সুধাংশু দাসকেও এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি বলে জানা গেছে।
রাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—“একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে এমন কথা বলার পরও কেন মুখ্যমন্ত্রী চুপ?”
কয়েকজন সামাজিক কর্মী জানিয়েছেন, তাঁরা শিগগিরই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন শুরু করবেন। আগরতলা ও ধলাই জেলায় ইতিমধ্যে কয়েকটি সংগঠন প্রতিবাদ সভা ডাকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, কোনও জনপ্রতিনিধি যদি প্রকাশ্যে ঘুষ বা অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের স্বীকারোক্তি দেন, তাহলে তা তদন্তের পর্যাপ্ত কারণ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। রাজ্য সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সেই বিষয়ে উপযুক্ত তদন্তের ব্যবস্থা করা।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৌরভ দেবনাথ বলেন, “এই ধরনের মন্তব্যকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। সংবিধান অনুযায়ী, কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে মুখ্যমন্ত্রীর কর্তব্য হল অবিলম্বে তাঁকে পদচ্যুত করে তদন্ত শুরু করা।”
ত্রিপুরা রাজনীতিতে এই ঘটনার পর নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। একদিকে বিরোধীদের ধারালো আক্রমণ, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ—দুই মিলিয়ে বিষয়টি বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠছে।