
হঠাৎ কেন তোলপাড় ত্রিপুরা? অনুপ্রবেশ ও মাদক ব্যবসায় জর্জরিত রাজ্য!
ত্রিপুরা রাজ্যে সম্প্রতি উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং মাদক ব্যবসার বিস্তার রাজ্যের সামাজিক ও প্রশাসনিক কাঠামোকে নাড়া দিচ্ছে। “আমরা বাঙালি” সংগঠনের সভাপতি গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল এ বিষয়ে স্পষ্ট অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, কিছু প্রভাবশালী দালাল ও অসাধু গোষ্ঠীর কারণে রাজ্যে অনুপ্রবেশ সহজ হয়ে উঠেছে। এর ফলে শুধু রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সাধারণ মানুষও বিভ্রান্তি ও আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশে সরকার পরিবর্তনের কারণে অনেকেই প্রাণ বাঁচানোর জন্য বা কর্মসংস্থানের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করছে। আবার অনেকেই দালালদের মাধ্যমে বেআইনিভাবে রাজ্যে ঢুকে পড়ছে। এর ফলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা শিথিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তিনি মনে করেন, যেসব এলাকায় ভৌগলিক কারণে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেই অঞ্চলগুলোতেই নজরদারির ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। তাই রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করা এখন সময়ের দাবি।
অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিভিন্ন জায়গায় বাঙালিরা কাজের সন্ধানে গেলে তাদের বাংলাদেশি ভেবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। গৌরাঙ্গ রুদ্র পালের মতে, এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে না, বরং বাঙালিদের উপর অযথা সামাজিক চাপ ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে।
আরও একটি বড় অভিযোগ উঠে এসেছে মাদক ব্যবসা নিয়ে। গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল বলেছেন, বেআইনি অনুপ্রবেশের পাশাপাশি মাদকদ্রব্যের অবাধ প্রবাহ রাজ্যকে “নেশার স্বর্গ” বানিয়ে তুলছে। সীমান্ত দিয়ে সহজে প্রবেশ করা মাদক বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, আর এর প্রভাব ভয়াবহভাবে পড়ছে যুব সমাজের উপর। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে রাজ্যের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।
তিনি অভিযোগ করেছেন, বেআইনি অনুপ্রবেশ রুখতে গিয়ে প্রশাসনের বিপুল পরিমাণ সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে মনোযোগ সরে যাচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে দালালচক্র এবং অসাধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।
গৌরাঙ্গ রুদ্র পালের মতে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার জন্য দায়ী দালালদের চিহ্নিত করা জরুরি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রভাব বা রঙ নির্বিশেষে এই দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এরা শুধু আইন ভাঙছে না, বরং গোটা রাজ্যের নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন
“আমরা বাঙালি” সংগঠন মনে করছে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি নজরদারি এবং সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অবিলম্বে সীমান্ত এলাকায় যৌথ বাহিনীর টহল এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
ত্রিপুরার সাধারণ মানুষও পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন। একদিকে মাদকাসক্তির প্রকোপ বাড়ছে, অন্যদিকে অনুপ্রবেশের কারণে স্থানীয়দের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এতে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে সমাজে।
ত্রিপুরার বর্তমান পরিস্থিতি শুধুমাত্র একটি রাজ্যের সমস্যা নয়, এটি গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত। অনুপ্রবেশ, মাদক ব্যবসা এবং দালালদের প্রভাব—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে রাজ্যের সামাজিক কাঠামো ও আইনশৃঙ্খলার উপর বড়সড় চাপ সৃষ্টি করছে।
গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল যেমন বলেছেন, “রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা না করলে সমস্যার সমাধান হবে না।” তাই এখন সময় এসেছে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের সমন্বয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার। না হলে ত্রিপুরা ক্রমেই অশান্তির পথে এগিয়ে যাবে এবং এর খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকেই।