
ত্রিপুরায় শুরু হলো দেশের প্রথম আইন প্রদর্শনী এক অভিনব উদ্যোগ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা এবার দেশের মধ্যে এক অভিনব উদ্যোগের সূচনা করল। বিচার ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য করতে রাজ্য সরকার আয়োজন করেছে এক বিশেষ প্রদর্শনীর। এ ধরনের প্রদর্শনী দেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম।
আগরতলার হাঁপানিয়া ইনডোর এক্সিবিশন হলে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের এই প্রদর্শনী। উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন,
“যদি সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা না যায়, তাহলে মানুষের আইনের ওপর আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগেই এই নতুন তিনটি ফৌজদারি আইন কার্যকর হয়েছে। রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের কাছে সেই পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দিতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।”
প্রদর্শনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর থিম্যাটিক আয়োজন। এখানে পুলিশ স্টেশন, আদালত ও কারাগারের আদলে তৈরি বিশেষ মঞ্চে সাধারণ মানুষকে নতুন আইনগুলোর বাস্তব রূপ দেখানো হচ্ছে। ফলে নাগরিকেরা শুধু তথ্যই পাচ্ছেন না, বরং বাস্তবে কেমনভাবে আইন প্রয়োগ হবে তার ধারণাও পাচ্ছেন।
ত্রিপুরার প্রদর্শনীতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তিনটি নতুন আইনকে—
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita)
ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (Bharatiya Nagarik Suraksha Sanhita)
ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম (Bharatiya Sakshya Adhiniyam)
ব্রিটিশ শাসনামলের পুরোনো আইনগুলিকে সরিয়ে এই নতুন আইনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে করা হয়েছে আরও দ্রুত, স্বচ্ছ এবং সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য।
প্রদর্শনীতে নাগরিকদের বোঝানো হচ্ছে কীভাবে নতুন আইনগুলো দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো—
ডিজিটাল অভিযোগ দাখিল: নাগরিকরা এখন যেকোনো জায়গা থেকে অনলাইনে বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। এতে সময় বাঁচবে এবং প্রক্রিয়া হবে সহজ।
অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী সাজা: ছোটখাটো অপরাধ ও বড় অপরাধকে আলাদা করে দেখা হবে। ফলে দ্রুত শুনানি ও শাস্তির ব্যবস্থা করা যাবে।
গ্রেপ্তার হলে অধিকার: যদি কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়, তবে তার নিকটাত্মীয়কে দ্রুত জানানো হবে—এটি এখন আইনগতভাবে নিশ্চিত।
নারী ও শিশু সুরক্ষা: নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।
এই প্রদর্শনী শুধু নতুন আইন প্রদর্শন করছে না, বরং মানুষকে আইনের প্রতি আস্থা তৈরি করতেও ভূমিকা রাখছে। আইনের ভাষা সাধারণত জটিল হয়, ফলে সাধারণ নাগরিকরা সঠিকভাবে তা বুঝতে পারেন না। কিন্তু ত্রিপুরা সরকারের এই উদ্যোগ সেই দূরত্ব ঘোচানোর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রিপুরা দেশের অন্য রাজ্যগুলোর জন্য একটি মডেল তৈরি করেছে। কারণ আইনকে কেবল প্রণয়ন করাই যথেষ্ট নয়, জনগণের কাছে সেটিকে সহজভাবে উপস্থাপন করা আরও জরুরি।
প্রদর্শনীতে শুধু তথ্য দেওয়া হচ্ছে না, বরং কুইজ প্রতিযোগিতা ও ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে নতুন আইন সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতনতা বাড়বে এবং আগ্রহও তৈরি হবে।
ডাঃ মানিক সাহা বলেন,
“আমরা ব্রিটিশ আমলের অপ্রয়োজনীয় ঔপনিবেশিক আইনগুলো বাতিল করছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত বিচার ব্যবস্থার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। ত্রিপুরা যে দেশের অগ্রণী রাজ্য, এই প্রদর্শনীই তার প্রমাণ।”
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নতুন আইনগুলো কার্যকর হলে দেশের বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। মামলার জট কমবে, বিচার প্রক্রিয়া হবে দ্রুততর, এবং নাগরিকরা আইনকে আর ভয়ের বিষয় মনে করবেন না—বরং সুরক্ষার আশ্রয় হিসেবে দেখবেন।
আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। হাজার হাজার নাগরিক এখানে ভিড় জমাচ্ছেন আইন সম্পর্কে জানার জন্য। ত্রিপুরা সরকারের এই উদ্যোগ প্রমাণ করেছে যে আইন শুধু আদালতের চার দেওয়ালে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবন ও সমাজকে গড়ে তোলার অন্যতম হাতিয়ার।
দেশের অন্য রাজ্যগুলোও যদি ত্রিপুরার এই উদ্যোগ থেকে শিক্ষা নেয়, তাহলে ভারতের বিচার ব্যবস্থা আরও বেশি স্বচ্ছ ও জনবান্ধব হয়ে উঠবে।