
ত্রিপুরা কি মাদক পাচারকারীদের হটস্পট ? আগরতলা রেলস্টেশন ধৃত দুই
আগরতলা: শনিবার রাতে আগরতলা রেলস্টেশনে তল্লাশির সময় গাঁজা পাচারকাণ্ডে এক যুবক ও এক যুবতীকে গ্রেপ্তার করল রেল পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে রাত প্রায় ৯টার সময় ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের নাম নিতীশ কুমার (২৫) এবং চন্দা কুমারী (২৪)। দুজনেই বিহারের ভাগলপুর জেলার বাসিন্দা বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
সেই সময় রেলস্টেশনে নিয়মিত নজরদারি চলছিল। সন্দেহভাজন যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি চালানোর অংশ হিসেবেই পুলিশ ওই যুবক ও যুবতীর কাছে পৌঁছায়। তাদের ব্যাগ পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে আসে বিপুল পরিমাণ গাঁজা। উদ্ধার হওয়া দুটি ব্যাগের একটি হাতব্যাগ ও একটি পিঠব্যাগের ভেতর থেকে মোট ৬.৩০৫ কেজি অবৈধ গাঁজা মেলে। কালোবাজারে যার আনুমানিক মূল্য এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
আগরতলা জিআরপিএস থানার অফিসাররা জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এনডিপিএস আইনের ধারা ২০(বি)(ii)(বি)/২৯ অনুসারে একটি নির্দিষ্ট মামলা রুজু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তে জানা যাচ্ছে, এরা গাঁজার চালান নিয়ে রাজ্যের বাইরে পাচার করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে এর পেছনে আরও কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ত্রিপুরা বরাবরই সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ায় এখানে মাদক পাচারের প্রবণতা প্রবল। বিশেষ করে গাঁজা চাষ এবং তা সীমান্ত পেরিয়ে পাচারের অভিযোগ বারবার সামনে আসে। রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশ গত কয়েক বছর ধরে এই পাচারচক্র ভাঙতে একাধিক অভিযান চালিয়ে আসছে। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাস থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিয়মিত তল্লাশি এবং নজরদারির ফলেই শনিবার রাতে এই বড় মাদক উদ্ধার সম্ভব হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুলিশ কর্তারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত নিতীশ কুমার ও চন্দা কুমারী নিজেদের দম্পতি বলে দাবি করেছে। তবে তাদের সম্পর্কের সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও তারা ঠিক কীভাবে আগরতলায় এসে পৌঁছাল এবং কার কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করল, তার সূত্রও খুঁজছে তদন্তকারী দল। পুলিশ মনে করছে, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বড় মাদকচক্রের খোঁজ মিলতে পারে।
ভারতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধ করার জন্য এনডিপিএস আইন কার্যকর। এই আইনের আওতায় ধরা পড়লে দীর্ঘমেয়াদি সাজা ও মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে। বিশেষ করে এত পরিমাণ মাদক উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেই সূত্রের খবর।
এই ঘটনায় সাধারণ যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য রেলস্টেশনে আরও বাড়তি নিরাপত্তা প্রয়োজন। তবে পুলিশ দাবি করছে, তারা ইতিমধ্যেই নজরদারির মাত্রা বাড়িয়েছে এবং এর ফলেই এমন সাফল্য ধরা দিচ্ছে।
শনিবার রাতের এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হল যে ত্রিপুরা মাদক পাচারের অন্যতম বড় রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে পুলিশের সক্রিয়তা ও তৎপরতার ফলেই এই ধরনের পাচারচক্র ভাঙা সম্ভব হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই দুই ধৃতকে জেরা করে পুলিশ আরও বড় কোনও চক্রের হদিশ পায় কি না।