
ত্রিপুরায় আগর চাষে নতুন দিগন্ত কৃষি-বনায়নের আওতায় আনছে সরকার
ত্রিপুরায় আগর চাষকে ঘিরে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। রাজ্য সরকার কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর এবং বনদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আগরকে কৃষি-বনায়নের (Agroforestry) আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। শুধু তাই নয়, আগর নার্সারি তৈরি করে সেখান থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে চারা বিতরণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই পদক্ষেপ রাজ্যের অর্থনীতিতে যেমন নতুন দিশা দেখাবে, তেমনি কৃষকরাও সরাসরি এর সুফল পাবেন।
সম্প্রতি অল ত্রিপুরা আগর উড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি দল কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বৈঠক শেষে মন্ত্রী জানান, ত্রিপুরার আগরের চাহিদা শুধু রাজ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, “আগরকে কৃষি-বনের আওতায় আনলে রাজ্যের জিএসটি রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।”
মন্ত্রী আরও মনে করিয়ে দেন, উত্তর জেলার কদমতলায় গত বছর ব্যাপক হারে আগর চাষ হয়েছিল। সেখান থেকেই সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করেছে। এই সাফল্যের ফলে কৃষকদের মধ্যে আগর চাষের আগ্রহ বেড়েছে। এখন সরকারের মূল লক্ষ্য হলো সেই আগ্রহকে আরও সুসংগঠিত করা এবং চাষের বিস্তার ঘটানো।
ত্রিপুরা সরকার ইতিমধ্যেই ২০২১ সালে ‘ত্রিপুরা আগর উড নীতি’ প্রণয়ন করেছে। মন্ত্রীর ভাষায়, পূর্ববর্তী সরকার এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, অথচ বর্তমান সরকার কৃষক ও শিল্প—দু’পক্ষের জন্যই আগরকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে তুলে ধরছে।
এছাড়া রাজ্য সরকার আগরের জন্য জিআই ট্যাগের আবেদনও করেছে। যদি তা মঞ্জুর হয়, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ত্রিপুরার আগরের আলাদা স্বীকৃতি তৈরি হবে। এটি রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকদের আর্থিক লাভ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম।
গত বছরে রাজ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকার আগর চিপস ও তেল বিক্রি হয়েছে। এই অঙ্কই প্রমাণ করে বাজারে আগরের চাহিদা কতটা উঁচুতে। কদমতলার অভিজ্ঞতা দেখে রাজ্যের অন্য জেলাগুলির কৃষকরাও আগর চাষে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন।
অন্যদিকে, গোডরেজ ও পতঞ্জলির মতো বৃহৎ সংস্থা ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় আগর-ভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এর ফলে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের জন্য নির্ভরযোগ্য বাজার তৈরি হচ্ছে এবং কৃষকের আয়ও নিশ্চয়তা পাচ্ছে।
অর্থনৈতিক লাভের পাশাপাশি সামাজিক দিকেও নজর দিচ্ছে সরকার। আগর নার্সারি গড়ে তুলে বিনামূল্যে চারা বিতরণের সিদ্ধান্ত সেই ভাবনারই প্রতিফলন। কৃষক যাতে প্রাথমিক বিনিয়োগের চাপ ছাড়াই চাষ শুরু করতে পারে, সেই সুযোগ তৈরি করাই সরকারের লক্ষ্য।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এই উদ্যোগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। সরকারের বিশ্বাস, এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে।
আগরকে কৃষি-বনায়নের আওতায় আনার অর্থ হলো কৃষিজমির সঙ্গে গাছের মিশ্র চাষ। এতে জমির ব্যবহার বাড়বে, মাটির উর্বরতা বজায় থাকবে এবং পরিবেশও সুরক্ষিত হবে। আগর যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি ফলপ্রসূ গাছ, তাই এটি কৃষকদের জন্য স্থায়ী সম্পদে পরিণত হবে।
ত্রিপুরার আগর ইতিমধ্যেই বিশ্ববিখ্যাত। সরকারের এই উদ্যোগ কৃষকদের হাতে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। রাজ্যের জন্য এটি কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং কৃষি, বন ও শিল্পের সমন্বয়ে এক টেকসই মডেল তৈরি করছে। আগর চাষ ত্রিপুরাকে আগামী দিনে শুধু ভারতের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পৌঁছে দেবে—এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
👉 আরও ভিডিও ও লাইভ আপডেট দেখতে ভিজিট করুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেল:
Tripura News YouTube
✨ সাবস্ক্রাইব করুন এখনই এবং প্রতিদিনের খবর পান সবার আগে।