
রাঙ্গামাটি খেয়াঘাটে সড়ক অবরোধে প্রমীলা বাহিনী: পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবার দাবিতে উত্তাল জনতা
অমরপুর-অম্পিনগর ভায়া তেলিয়ামুড়া মূল সড়কের রাঙ্গামাটি খেয়াঘাট এলাকা বুধবার সকালে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার প্রতিবাদে স্থানীয় প্রমীলা বাহিনী এবং গ্রামবাসীরা একযোগে সড়ক অবরোধে বসেন। তাঁদের দাবি ছিল একটাই—অবিলম্বে নিয়মিত পানীয় জলের সরবরাহ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে।
অবরোধকারীদের অভিযোগ, প্রায় মাসের পর মাস ধরে এলাকাবাসীরা পানীয় জলের অভাব ও অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যায় ভুগছেন। বারবার মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও বিদ্যুৎ দপ্তর কিংবা জল সরবরাহ বিভাগ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। স্থানীয়দের বক্তব্য, বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা বহুদিন ধরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আসেননি। ফলে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং গ্রামবাসীরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামেন।
হঠাৎ অবরোধের কারণে অমরপুর-অম্পিনগর মূল সড়কের দুই প্রান্তে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে স্তব্ধ হয়ে যায়। পণ্যবাহী ট্রাক থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী যানবাহন দীর্ঘ লাইনে আটকে পড়ে। সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী ও চাকুরিজীবীরা পড়েন মারাত্মক সমস্যায়।
অবরোধের খবর পৌঁছাতেই বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কর্তব্যরত আধিকারিকরা প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন এবং পরে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর প্রশাসন আশ্বাস দেয়, পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করা হবে এবং সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশাসনের এই আশ্বাসের ভিত্তিতে অবশেষে গ্রামবাসীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন। তবে স্থানীয়দের একাংশ জানান, বারবার আশ্বাস মিললেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। তাই এবার তাঁরা চান লিখিত প্রতিশ্রুতি এবং দ্রুত সমাধান। অন্যথায় পুনরায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন অনেকে।
একজন অবরোধকারী জানান, “আমরা বহুদিন ধরে বিদ্যুৎ ও জলের সমস্যায় ভুগছি। রাতের পর রাত অন্ধকারে কাটাতে হচ্ছে। পানীয় জল আনতে যেতে হচ্ছে দূরের গ্রামে। অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়েই আজ রাস্তায় নামতে হলো।”
আরেকজন ক্ষুব্ধ গৃহবধূ বলেন, “শুধু প্রতিশ্রুতি শুনে আর বসে থাকলে হবে না। এখনই যদি সমস্যার সমাধান না হয়, আমরা আবারও অবরোধে বসব।”
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্থানীয়দের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ ও জল দপ্তরের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করা হবে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দিনের বেশ কিছুটা সময় অবরোধ চলায় ওই এলাকায় যাতায়াত কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে অবরোধ প্রত্যাহারের পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে স্থানীয়দের মনে প্রশাসনের প্রতি গভীর ক্ষোভ রয়ে গেছে। অনেকেই মনে করছেন, সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে ভবিষ্যতে আরও তীব্র আন্দোলনের জন্ম নিতে পারে।
পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘদিন ভোগান্তিতে থাকা রাঙ্গামাটি খেয়াঘাট এলাকার মানুষ এবার প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছেন। প্রশাসনের আশ্বাসে সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত হলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে এ আন্দোলন ফের জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।