
স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস যতই ভাসুক, তার অন্তরালে লুকিয়ে আছে অগণিত বেদনা ও ক্ষতের গল্প। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ছিল ভারতের ইতিহাসে এক দগদগে অধ্যায়—যেখানে স্বভূমে পরবাসী হয়ে পড়েছিলেন কোটি কোটি মানুষ, হারিয়েছিলেন ঘর, পরিবার, এবং নিরাপত্তা। সেই মর্মন্তুদ স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে প্রতি বছর ১৪ আগস্ট পালন করা হয় বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস।
২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দিনটিকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে দেশবাসী ও বিশেষত নতুন প্রজন্ম ইতিহাসের এই অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিতে পারে। সেই সূত্রেই এ বছরও ত্রিপুরা রাজ্যে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
বৃহস্পতিবার আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম মহাবিদ্যালয়ের রবীন্দ্র হলে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে তিনি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১৪ আগস্ট শুধু একটি তারিখ নয়, এটি স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতার পেছনের অগণিত আত্মত্যাগ ও বেদনাকে। যারা আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে, তাদের কাছে এই সত্য তুলে ধরা জরুরি।”
তিনি আরও জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে দেশভাগের বিভীষিকা তুলে ধরতে উচ্চ শিক্ষা দপ্তর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, ইতিহাস জানার মাধ্যমেই তরুণ প্রজন্ম দেশের স্বার্থ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হতে শেখে।
মুখ্যমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, অনেক তরুণ ইতিহাস সম্পর্কে পর্যাপ্ত জানে না। অথচ ইতিহাসের পাতা কখনো মুছে যায় না। তাই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে অবগত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
“স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ আমরা উদযাপন করি, কিন্তু সেই স্বাধীনতার পেছনে কত অশ্রু, কত অনাথ শিশু, কত নিখোঁজ মুখ, আর কত নির্যাতিত মা-বোনের গল্প লুকিয়ে আছে—তা জানা উচিত,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
দেশভাগ কেবল রাজনৈতিক সীমারেখা বদল ছিল না, এটি ছিল মানবিক বিপর্যয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিল, কেউ হারিয়েছে প্রিয়জন, কেউ হারিয়েছে নিজের অস্তিত্ববোধ। বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস তাই শুধু শোকের দিন নয়—এটি ইতিহাসকে স্মরণ করে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষণীয় বার্তা গ্রহণের দিন।
ত্রিপুরার এই আয়োজনে যেমন ইতিহাসের করুণ বাস্তবতা ফুটে উঠেছে, তেমনই তরুণদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগানোর চেষ্টা ছিল স্পষ্ট। স্বাধীনতার আনন্দের পাশাপাশি এই ত্যাগ ও বেদনার স্মৃতি যেন প্রজন্মের পর প্রজন্মে বেঁচে থাকে—এটাই ছিল অনুষ্ঠানের মূল সুর।