
* নিজস্ব প্রতিনিধি : ত্রিপুরা : শুক্রবার: ৭ মার্চ নারীর অধিকার, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১১ দফা দাবি পেশ করল গার্লস প্রাউটিষ্ট। সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধি দল শুক্রবার পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা শাসকের কাছে এই দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জমা দেয়।গার্লস প্রাউটিষ্ট দীর্ঘদিন ধরে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। সংগঠনটির দাবি, সমাজে এখনো নারীরা লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে রয়েছে। নারীদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে এবং তাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংগঠনটি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।নারী শিক্ষার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার দাবিগার্লস প্রাউটিষ্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নারীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তাদের মতে, শিক্ষা নারীর ক্ষমতায়নের মূল চাবিকাঠি। অনেক মেয়ে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায় না, ফলে তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানে সরকারকে অবিলম্বে বিনামূল্যে শিক্ষা চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।সংগঠনটি আরও দাবি করেছে যে, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাদানের দায়িত্ব নারীদের ওপর অর্পণ করতে হবে। এর ফলে একদিকে যেমন নারীদের কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে শিশুদের প্রতি মায়েদের যত্নশীল দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবিনারীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে সংগঠনটি ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। গার্লস প্রাউটিষ্টের মতে, ধর্ষণ একটি ঘৃণ্য অপরাধ এবং এটি নারী হত্যার সমতুল্য বলে গণ্য করা উচিত। তাই ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সমাজে এই অপরাধ প্রবণতা কমে।এছাড়া, সংগঠনটি নারীদের আত্মরক্ষার জন্য বিদ্যালয়স্তর থেকে জুডো ও ক্যারাটে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, আত্মরক্ষার কৌশল জানা থাকলে নারীরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারবে।নারীর মর্যাদা রক্ষায় সামাজিক সংস্কারের দাবিসংগঠনটি দাবি জানিয়েছে, টিভি, সিনেমা, ভিডিও ও বিজ্ঞাপনে নারীদের অশালীনভাবে উপস্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। নারীদের প্রতি অবমাননাকর উপস্থাপনা বন্ধ না করলে সমাজে নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তারা যৌন উদ্দীপক সাহিত্য ও অশ্লীল সংস্কৃতির সম্প্রচার বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছে।এছাড়া, যৌতুক প্রথা নির্মূল করার দাবিও উত্থাপন করেছে সংগঠনটি। তারা বলেছে, যৌতুক প্রথার ফলে বহু নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই প্রথা নির্মূল করা জরুরি।নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ননারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বিশেষ কর্মসূচি প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে গার্লস প্রাউটিষ্ট। তারা চায়, নারীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হোক এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হোক।এছাড়া, পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে লোকসভা পর্যন্ত নারীদের সমান রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। তাদের মতে, নারীরা রাজনীতিতে সমান অংশগ্রহণ না করলে সমাজে প্রকৃত অর্থে লিঙ্গসমতা আসবে না।মাদকবিরোধী পদক্ষেপ ও বিকল্প কর্মসংস্থানসমাজে মাদকাসক্তি দিন দিন বাড়ছে, যা নারীদের জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গার্লস প্রাউটিষ্ট মদ, গাঁজা ও সব ধরনের মাদকের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। তবে সংগঠনটি কেবল নিষেধাজ্ঞার পক্ষে নয়, তারা বলছে, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে মাদকের প্রবণতা কমবে এবং সমাজে সুস্থ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে।সমাজে ন্যায্য অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার দাবিসংগঠনটি মনে করে, নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। তারা চায়, সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে উন্নয়নের সুযোগ সকলের জন্য সমানভাবে নিশ্চিত করা হোক।গার্লস প্রাউটিষ্টের ১১ দফা দাবি নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংগঠনটি মনে করে, এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সমাজে নারীদের প্রতি বৈষম্য কমবে, তারা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সমান সুযোগ পাবে, এবং তাদের প্রতি সহিংসতা হ্রাস পাবে।তবে, এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। আইন প্রণয়ন করাই যথেষ্ট নয়; তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, নারীদের আত্মনির্ভরশীল করতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। একমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে।