
সস্তা হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কার্যকর নতুন জিএসটি মধ্যবিত্তের খরচ কমতে পারে দুর্গাপুজোর আগে
দুর্গাপুজোর ঠিক আগে মধ্যবিত্তের জন্য সুখবর আসতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার জিএসটি (GST) কাঠামোয় বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটতে পারে। বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে দীপাবলীর আগে সাধারণ মানুষকে কর কাঠামোয় পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় উপহার দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী, এদিনের বৈঠককে ঘিরে ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মধ্যবিত্তের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে।
বর্তমান জিএসটি কাঠামো
এখন দেশে মোট চারটি জিএসটি স্ল্যাব চালু আছে—
৫%
১২%
১৮%
২৮%
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই চার স্ল্যাবকে সংকুচিত করে কেবল দুটি রাখা হবে। ফলে ১২% এবং ২৮% স্ল্যাব কার্যত উঠে যেতে পারে। এতে করে বিভিন্ন পণ্যের দামে বড় পরিবর্তন আসবে।
২৮% থেকে নামতে পারে ১৮%-এ
১২% থেকে নামতে পারে ৫%-এ
এমন হলে দৈনন্দিন জীবনের বহু পণ্য ও পরিষেবা সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসবে।
কোন কোন জিনিস সস্তা হতে পারে জানুন বিস্তারিত….
অটোমোবাইল
১২০০ সিসির নিচের ছোট গাড়ি, ৩৫০ সিসির নিচের মোটরবাইক এবং অটো পার্টস—সবকিছুর দামই অনেকটা হালকা হতে পারে। এতদিন এদের উপর ২৮% জিএসটি ধার্য হত, তা ১৮%-এ নামানো হতে পারে। ফলে ছোট গাড়ি বা বাইক কেনা আরও সহজ হয়ে উঠবে।
হসপিটালিটি ও বিনোদন
হোটেলের ভাড়া এবং সিনেমার টিকিটের ক্ষেত্রেও বড় সুবিধা পেতে চলেছেন ভোক্তারা। বর্তমানে যেখানে ১২% হারে জিএসটি বসে, তা কমে ৫%-এ নামতে পারে। ফলে পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া বা হোটেলে থাকা—সবই সাশ্রয়ী হবে।
চিকিৎসা পরিষেবা
ক্যানসারের ওষুধ ইতিমধ্যেই জিএসটি ছাড়ের আওতায় রয়েছে। এবার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, মেডিক্যাল সামগ্রী, এমনকি স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমার প্রিমিয়ামের উপরও কর ছাড় আসতে পারে। এরফলে স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য
পনীর, খাখরা, পিৎজা ব্রেড, জ্যুস, কোকোনাট ওয়াটার, মাখন, চিজ, পাস্তা, আইসক্রিম—এসব খাদ্যদ্রব্যের উপর জিএসটি ১২% থেকে ৫%-এ নামানো হতে পারে। কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কর প্রত্যাহারেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষিপণ্য ও সার
সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড এবং অ্যামোনিয়া জাতীয় সারও সস্তা হতে পারে। এই শ্রেণির উপর জিএসটি ১৮% থেকে কমে ৫% হতে পারে। কৃষকদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে বড় স্বস্তি।
বস্ত্র
সিন্থেটিক কাপড়, ফাইবার সুতো, কার্পেট, হাতে বোনা কাপড়—এসবের উপরও করহার ১২% থেকে ৫%-এ নামতে পারে।
নবায়নযোগ্য শক্তি
সোলার কুকারের উপর জিএসটি ১২% থেকে ৫%-এ নামানো হতে পারে। এতে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির প্রসার ঘটবে।
স্টেশনারি
ইরেজার, ম্যাপ, চার্ট, নোটবুক, অ্যাটলাসের মতো পণ্যেও কর ছাড়ের সম্ভাবনা। এতদিন যেগুলির উপর ১২% কর বসত, তা হয় কমে ৫% হবে অথবা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হতে পারে।
টয়লেট্রিজ
টুথপাউডার, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, চুলের তেল, সাবান—এসব দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের উপর জিএসটি বড়সড় ভাবে কমতে পারে। ১২% বা ১৮% থেকে সরাসরি ৫% হতে পারে। এমনকি ছাতার উপরও করহার কমানোর চিন্তাভাবনা চলছে।
কোন কোন জিনিসের দাম বাড়তে পারে?
সিন ট্যাক্স
সিগারেট, পানমশলা, তামাকজাত পণ্যের উপর বাড়তি কর বসতে পারে। ৪০% পর্যন্ত সিন ট্যাক্স বসানো হলে এগুলির দাম অনেকটাই বাড়বে।
ইলেকট্রিক গাড়ি
যেখানে ছোট গাড়ির দাম কমবে, সেখানে বিলাসবহুল ইলেকট্রিক গাড়ির দাম বাড়তে পারে।
২০–৪০ লাখ টাকার ইলেকট্রিক গাড়িতে কর ৫% থেকে বেড়ে ১৮% হতে পারে।
৪০ লাখের বেশি দামের ইলেকট্রিক গাড়ির উপর ৪০% কর বসতে পারে।
পোশাক
২৫০০ টাকার বেশি দামের পোশাকের উপর করহার ১২% থেকে বেড়ে ১৮% হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন হলে একদিকে মধ্যবিত্তের ব্যয় কমবে। খাবার, পোশাক, ওষুধ থেকে শুরু করে পরিবহন খরচ—সব কিছুতে সাশ্রয় আসবে। তবে সরকারের রাজস্বে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। অনুমান করা হচ্ছে, বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।
তবে কেন্দ্র মনে করছে, করহার কমলে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, যার ফলে বিক্রি এবং উৎপাদন বাড়বে। এতে শিল্পখাত ও পরিষেবা খাতে নতুন গতি আসতে পারে।
শোনা যাচ্ছে, নতুন জিএসটি স্ল্যাব কার্যকর হতে পারে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে। ফলে দুর্গাপুজোর আগেই মধ্যবিত্ত পকেটে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে পারে।
জিএসটির নতুন কাঠামো কার্যকর হলে একদিকে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচ অনেকটাই কমে আসবে, অন্যদিকে বিলাসবহুল পণ্য ও তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়বে। পুজোর মরশুমে সরকারের এই পদক্ষেপ মধ্যবিত্তের মুখে হাসি ফোটালেও রাজস্ব ঘাটতির বোঝা কিভাবে সামলানো হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।