জীবন দিলেন, কিন্তু বাঁচালেন শত প্রাণ — শহিদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিদ্ধার্থ
গুজরাটের জামনগরের আকাশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শহিদ হলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিদ্ধার্থ যাদব। ভারতীয় বায়ুসেনার এই তরুণ অফিসার মাত্র ২৮ বছর বয়সে জীবন উৎসর্গ করলেন — শুধু নিজের কর্তব্য নয়, অসংখ্য নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচাতেও।শনিবার, হরিয়ানার রেওয়ারি জেলার ছোট্ট গ্রাম মাজরা ভালখিতে সম্পন্ন হয় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় বিদায় জানানো হয় সাহসী সন্তানকে। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল গোটা গ্রাম। কোথাও যেন থমকে গিয়েছিল সময়।মরদেহ পৌঁছতেই গ্রামে জমায়েত হন শত শত মানুষ — কেউ প্রাক্তন সেনাকর্মী, কেউ সাধারণ গ্রামবাসী, আবার কেউ সিদ্ধার্থের স্কুলজীবনের বন্ধু। হাতে তেরঙ্গা পতাকা, মুখে একটাই কথা — “আমাদের গর্ব, আমাদের সন্তান।”শেষযাত্রায় পুষ্পবৃষ্টি করে শহিদকে বিদায় জানানো হয়। হৃদয়বিদারক সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর বাগদত্তা সোনিয়া। চোখে জল, মুখে চাপা বিষাদ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাঁর বলা একটি লাইন — “তুমি বলেছিলে, আমায় নিতে আসবে… কিন্তু তুমি তো ফিরলে না।” এই একটি বাক্যে যেন ধরা পড়ে গেছে অগণিত অনুভূতির বেদনা।৩ এপ্রিল রাতে সিদ্ধার্থ নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য জামনগর এয়ারফিল্ড থেকে উড়ান শুরু করেন জাগুয়ার যুদ্ধবিমান নিয়ে। উড়ানের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটিতে দেখা দেয় যান্ত্রিক ত্রুটি। সেই সময় বিমানটি উড়ছিল জনবহুল এলাকার উপর দিয়ে — সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হাতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড।তিনি চাইলে ইজেক্ট করে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারতেন, কিন্তু তাতে বিমানটি ভেঙে পড়ত জনবসতির উপর। সিদ্ধার্থ নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বিমানটিকে জনবসতি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যান। শেষমেশ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় সুবর্দা গ্রামের এক খোলা মাঠে — তিনি শহিদ হন, কিন্তু বেঁচে যায় অগণিত প্রাণ।এই আত্মত্যাগ শুধু একজন সেনার দৃষ্টান্ত নয় — এটি একজন মানবিক হৃদয়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার নিদর্শন। তিনি ছিলেন কর্তব্যপরায়ণ, সাহসী, এবং সর্বোপরি একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিদ্ধার্থ যাদব আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তাঁর আত্মত্যাগ দেশবাসীর মনে প্রেরণা হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ।
Post Comment