
অসমাপ্ত ধূমকেতুর কাহিনিতে দেব শুভশ্রীর জুটি | শুরু জল্পনা
টলিউডে দেব-শুভশ্রীর জুটি মানেই অন্যরকম উত্তেজনা। ভক্তদের কাছে যাঁরা পরিচিত #DESU নামে, সেই জুটিকে ঘিরে যেমন প্রত্যাশা থাকে, তেমনই চলে সমালোচনা। অনেকটা সময় পর ফের একসঙ্গে তাঁদের দেখা গেল ধূমকেতু ছবিতে। মুক্তির আগেই প্রচারে ঝড় তুলেছিল এই ছবি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দর্শকদের মনে থেকে গেল এক প্রশ্ন— কেন ছবির শেষে ভেসে উঠল লেখা “অসমাপ্ত কাহিনী”?
প্রযোজক থেকে পরিচালক, নায়ক থেকে নায়িকা— সবাই মিলে ছবিকে ঘিরে তৈরি করেছিলেন আলোচনার কেন্দ্র। দেব-শুভশ্রীর রঙ মিলিয়ে পোশাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজিরা ছিল সোশ্যাল মিডিয়ার মূল আকর্ষণ। এক যুগ পর একসঙ্গে প্রোমোশনে ধরা দিয়েছিলেন তাঁরা। #DESU হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছিল টুইটার থেকে ইনস্টাগ্রাম পর্যন্ত। ফলে দর্শকের প্রত্যাশার মাত্রা ছিল তুঙ্গে।
পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছবির চিত্রগ্রহণে বিশেষ নজর দিয়েছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে। কখনও কাঞ্চনজঙ্ঘা, কখনও সবুজ পাইন বন, কখনও বরফঢাকা মাঠ— প্রতিটি ফ্রেম যেন পোস্টকার্ড। কিন্তু গল্পের ভিত সেভাবে শক্ত হলো না। নায়ককে দেখা গেল এক জঙ্গি মিশনে, কিন্তু দর্শকের মনে প্রশ্ন থেকে গেল— কেন তিনি এই পথে এলেন? কার হাতছানি তাঁকে এই চরম সিদ্ধান্তে নিয়ে গেল?
উগ্রপন্থী সংগঠনের চক্রান্ত, নাশকতার পরিকল্পনা, প্রতিশোধের কারণ— সবকিছুই ছবিতে অর্ধেক বলা থেকে গেল। একদিকে দেখা গেল প্রৌঢ় চরিত্রে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, অন্যদিকে দেব। কিন্তু দলের অন্য সদস্যরা কেবল নামেই থেকে গেলেন, দৃশ্যে তাঁদের অস্তিত্ব প্রায় নেই। ফলে গল্পের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠল দেবের চরিত্রই।
দেবের চরিত্র হঠাৎই যেন আবির্ভূত হয় প্রতিশোধের গল্প বলতে। সম্ভবত সেই কারণেই নাম ধূমকেতু— ক্ষণিকের উজ্জ্বল উপস্থিতি। কিন্তু প্রতিশোধের কারণ কী, আর তার ফলাফল কী হতে পারত— সেই সবকিছুই দর্শকের হাতে রয়ে গেল অসম্পূর্ণ রেখায় আঁকা ছবির মতো। এই খোলামেলা প্রশ্নই সিনেমার শেষে ভেসে উঠল “অসমাপ্ত কাহিনী” শব্দে।
অভিনয়ে আলাদা করে উল্লেখ করতে হয় রুদ্রনীল ঘোষকে। সীমিত পরিসরেও তিনি নিজস্ব ছাপ রেখেছেন। আরেকটি বড় চমক দেবের প্রস্থেটিক মেকআপ। বলিউডে কাজ করা বিক্রম গায়কোয়াড় দেবের চেহারায় যে পরিবর্তন এনেছেন, তা ছবিকে দিয়েছে অন্য স্বাদ। যদিও ছবির শ্যুট হয়েছিল প্রায় দশ বছর আগে, ফলে দেবের অভিনয়ে তখনকার কাঁচা ভাব স্পষ্ট। তবুও বলা যায়, বুনোহাঁস থেকে শুরু করে আজকের বিকল্প ধারার ছবিতে দেবের যে যাত্রা, তার বীজ লুকিয়ে ছিল এই ধূমকেতু-তেই।
নায়িকা হিসেবে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় যথাযথ উপস্থিত ছিলেন। যদিও তাঁর চরিত্রে আরও স্তর থাকলে ভালো লাগত। তবুও সার্জারির আগের শুভশ্রীর সরল মুখশ্রী ও চোখের ভাষা এই ছবিতেও দর্শককে আকর্ষণ করেছে। তাঁর ও দেবের পর্দার রসায়নই আসলে ছবির মূল আকর্ষণ।
গল্পের ঘাটতি থাকলেও, ভক্তদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল দেব-শুভশ্রীর অন-স্ক্রিন কেমিস্ট্রি। এখানে বিদায় বোলো না গানটি তাদের প্রেমময় মুহূর্তকে আরও আবেগঘন করেছে। ভক্তরা বলছেন, একসঙ্গে কাজ করলে তাঁরা এখনও টলিউডে ম্যাজিক তৈরি করতে পারেন।
এই ছবির শ্যুট শুরু হওয়ার আগে ভেঙে গিয়েছিল দেব-শুভশ্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক। তবুও পর্দায় সে ছাপ পড়েনি। বরং তাঁদের পেশাদারিত্বই চোখে পড়েছে দর্শকের। প্রেম-অভিমানমাখা দৃশ্যে একটুও অস্বস্তি দেখা যায়নি, উল্টে রিলের প্রেম যেন আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে। আর প্রচারের মঞ্চে বহু বছর বাদে তাঁদের একসঙ্গে দেখাও ভক্তদের কাছে ছিল বিশেষ মুহূর্ত।
সবশেষে ছবির রহস্য থেকেই যায়— কেন শেষে লেখা হল “অসমাপ্ত কাহিনী”? তাহলে কি নির্মাতারা ভাবছেন দ্বিতীয় পর্বের কথা? দর্শকের প্রত্যাশা এখন সেই জায়গাতেই। যদি সত্যিই ধূমকেতু-২ তৈরি হয়, তবে কি ফের একসঙ্গে ধরা দেবেন দেব-শুভশ্রী?
ধূমকেতু শেষ পর্যন্ত এক অসমাপ্ত গল্প। পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দেব-শুভশ্রীর রসায়ন, রুদ্রনীলের অভিনয় আর দেবের প্রস্থেটিক লুকই ছবির বড় প্রাপ্তি। তবে কাহিনির দুর্বলতা দর্শককে হতাশ করেছে। ভক্তরা তবুও আশা রাখছেন— এখানেই বিদায় নয়। হয়তো পরের কোনও দিনে, অন্য কোনও ফ্রেমে আবার ফিরে আসবে প্রিয় দেব শুভশ্রী।