
ত্রিপুরায় প্রথম ডাটা সেন্টার স্থাপন করছে এয়ারটেল
দেশের সার্বিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে একটি রাজ্যের অগ্রগতি—সবকিছুর মূল ভিত্তি ইঞ্জিনিয়ারদের অবদান। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, নকশা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আধুনিক ভারত এগিয়ে চলেছে। ইঞ্জিনিয়ার দিবসের শুভক্ষণে আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে অনুষ্ঠিত ৫৮তম অনুষ্ঠানে এ কথাই স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা পূর্তমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী ভারতরত্ন ড. এম বিশ্বেশ্বরাইয়ার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। পানীয় জল সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান আজও অনন্য।” তিনি বিশ্বেশ্বরাইয়াকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে এদিনের অনুষ্ঠান শুরু করেন।
ডাঃ সাহা উল্লেখ করেন, একটি উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। ভবন, রাস্তা, সেতু, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো—সবক্ষেত্রেই তাদের শ্রম ও দক্ষতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে আমরা বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭ রোডম্যাপও তৈরি করেছি।”
অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় ঘোষণা ছিল এয়ারটেলের আসন্ন ডাটা সেন্টার প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পূর্ব ভারতের মধ্যে ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করছে এয়ারটেল। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জমি প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই প্রকল্প শুধু তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নয়, কর্মসংস্থান ও পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রেও রাজ্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।”
ত্রিপুরায় প্রথম ডাটা সেন্টার স্থাপন করছে এয়ারটেল
ত্রিপুরার প্রযুক্তি পরিকাঠামোয় নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে এয়ারটেল। মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা ঘোষণা করেছেন যে, পূর্ব ভারতের মধ্যে ত্রিপুরাতেই প্রথমবারের মতো একটি অত্যাধুনিক ডাটা সেন্টার গড়ে উঠছে। সরকারের পক্ষ থেকে জমি বরাদ্দ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
এই প্রকল্প রাজ্যের ডিজিটাল সংযোগ, ক্লাউড সেবা ও সাইবার সিকিউরিটি-র মান বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ডাটা সেন্টার চালু হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের স্টার্টআপ ও আইটি কোম্পানিগুলির জন্য বিশাল সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “এয়ারটেলের এই উদ্যোগ ত্রিপুরার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এক বড় মাইলফলক। এটি বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭ রোডম্যাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যুবসমাজের জন্য বহুমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।”
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ত্রিপুরা শুধু ডিজিটাল পরিষেবার ক্ষেত্রে নয়, সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এবছরের বাজেটে প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “অবকাঠামো না হলে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই ইঞ্জিনিয়ারদের আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে এবং প্রতিটি কাজে নির্ভুলতা বজায় রাখতে হবে।”
রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্যোগেই ইতিমধ্যেই ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে জেলা, মহকুমা, ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে ই-অফিস চালু হয়েছে। ড্রোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের কথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষের জীবন আরও সহজ হবে।
ত্রিপুরায় বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—ত্রিপুরা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এনআইটি), ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (ট্রিপল আইটি), পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ইকফাই ইউনিভার্সিটি ও টেকনো ইন্ডিয়া। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা তরুণ প্রকৌশলীরা রাজ্যের উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।
ডাঃ সাহা ইঞ্জিনিয়ারদের অবদানের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন গুজরাটের স্ট্যাচু অব ইউনিটি এবং জম্মু-কাশ্মীরের চেনাব ব্রিজ। তাঁর বক্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল যে, এসব বিশাল প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ারদের অক্লান্ত শ্রম ও উদ্ভাবনী মেধার ফলেই সম্ভব হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান, ইঞ্জিনিয়ারদের উচিত হবে রাজ্যের নিজস্ব পণ্য ও সম্পদ ব্যবহার করে নতুন প্রকল্পের সম্ভাবনা খুঁজে বের করা। এতে একদিকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হবে, অন্যদিকে রাজ্যের মাথাপিছু আয় ও জিএসডিপি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।
ত্রিপুরায় প্রায় ২.১ লক্ষ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা (MSME) রয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই খাতে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, এনআইটির ডিরেক্টর প্রফেসর শরৎ কুমার পাত্র, পূর্ত দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স-এর চেয়ারম্যান পরমানন্দ সরকার ব্যানার্জি, পূর্ত দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার রাজীব দেববর্মা সহ রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ার সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
দিনের শেষে মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান, “ইঞ্জিনিয়ার দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত যে আমরা সবাই মিলে ত্রিপুরাকে উন্নত রাজ্যের কাতারে নিয়ে যাব।