
নিজস্ব প্রতিনিধি : ত্রিপুরা : প্রিয়াংকা বনিক :১৯ নভেম্বর
গত রবিবার রাত আনুমানিক সাতটা নাগাদ সাব্রুম মহকুমার রুপাইছরি ব্লক অন্তর্গত বাগমারা হরিদাস চৌধুরীপাড়া এলাকায় ১৮ বর্ষীয় জনজাতি রমণী সুন্দরম ত্রিপুরার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা সাব্রুম মহকুমা এলাকা জুড়ে। জানা যায় গত চার বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৪ বর্শিয় সুন্দরম ত্রিপুরার সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয় হরিদাস চৌধুরীপাড়া এলাকার জনজাতি যুবক তপন জয় ত্রিপুরার। বর্তমানে তাদের রয়েছে দুই বছরের একটি ফুট ফুটে শিশু সন্তান। রবিবার বাড়ির সকলের মধ্যাহ্নভোজের পর সুন্দরম ত্রিপুরা বেরোয় পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করার জন্য। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাড়ি ফেরার নাম নেই সুন্দরমের। অবশেষে তার বাড়ির লোকসহ এলাকার জনা কয়েক সুন্দরম কে খুঁজতে বেরোয় এবং আনুমানিক রাত ৭টা নাগাদ বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরে এক জুমের খেতে পাহাড় থেকে প্রায় ১০০ মিটার নিচে সুন্দরমের দেহ খুঁজে পায়।জানা যায় তখন তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিল তখন রক্তের চিহ্ন। গোটা বিষয় সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পায় সুন্দরম ত্রিপুরার বাবার বাড়ির লোকজন। সুন্দরম ত্রিপুরার বাবার বাড়ি দক্ষিণ জেলার জলাইবাড়ী এলাকার দেবদারুতে। ঘটনার খবর পেয়ে সুন্দরমের বাবার বাড়ির লোকজন দেবদারু আউটপোস্টে যোগাযোগ করলে দেবদারু আউটপোষ্টের পুলিশ সাব্রুমের মনু থানা কে গোটা বিষয় সম্বন্ধে জানান দেয়। মনু থানার পুলিশ তৎক্ষণাৎ বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এবং সাব্রুম মহকুমার পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকার সহ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ভোররাত আনুমানিক চারটা নাগাদ মৃতদেহ সাব্রুম মহকুমা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয়। জানা যায় সুন্দরম ত্রিপুরার ডান দিকের কপালে তিনটি ভারী আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, গাল এবং বুকে রয়েছে নখের আঁচড়। গোটা ঘটনা পরিলক্ষিত করে সাব্রুম মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকার খবর দেন ফরেনসিক টিম এবং ডগ স্কোয়ার্ডকে। সোমবার আনুমানিক বেলা বারোটা নাগাদ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকার একটি স্পেশাল দল গঠন করে গোটা ঘটনার তদন্তে নামেন। রাতে ঘটনাস্থল থেকে তেমন কিছু পাওয়া না গেলেও সোমবার দুপুর আনুমানিক দুইটা নাগাত ফরেনসিক টিম এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে থাকা পুলিশের দল সুন্দরমের হাতে ব্যবহার করা একটি তাবিজ এবং ঘটনাস্থলে কিছুটা আগে কয়েকটি গাছের পাতায় রক্তের দাগের সন্ধান বের করতে সক্ষম হন। এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা গুঞ্জন সুন্দর কাকাই শ্বশুরের সাথে ছিল সুন্দরমের অবৈধ সম্পর্ক।এবং সে দু মাসের গর্ভবতী বলেও জানা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সমস্ত ধরনের প্রমাণ সংগ্রহ করে এবং মৃতদেহের ময়নাতদন্ত ও গর্ভে থাকা শিশুর ডিএনএ টেস্ট করাবে বলে জানা যায়। সোমবার রাত আনুমানিক নয়টা নাগাদ চলে সুন্দরমের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাসাবাদের ফলে উঠে আসে নিহত মহিলার কাকা শ্বশুর সুনীল ত্রিপুরার নাম, যার সাথে অবৈধ সম্পর্ক ঘিরে মাস খানেক আগে এলাকায় বসেছিল সালিশি সভা। সালিশি সভার পরে সুন্দরমের স্বামী ধারালো অস্ত্র দিয়ে অভিযুক্ত কাকা শ্বশুর তথা সুনীল ত্রিপুরার বাড়ির টিনের ঘর কুচি কুচি করে কেটে ফেলে। ফলে ভীত সন্ত্রস্ত সুনীল ত্রিপুরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় সেই সময়। এরই মধ্যে সুন্দরমকে তার বাবার বাড়ির লোকজন দেবদারু নিয়ে রাখে সপ্তাহ দুই এক স্বামীসহ।এরই মধ্যে নিজ বাড়ি ফিরে আসে পালিয়ে যাওয়া সুনিলও। গত বৃহস্পতিবার নিহত সুন্দরম তার স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর রবিবার দুপুরে লারকি আনতে গিয়ে আর ঘরে ফিরে আসা হয়নি সুন্দরোমের।এবং ঘটনার পরেই ব্যাপাত্তা কাকা শশুর সুনীল ত্রিপুরা। গতকাল অর্থাৎ সোমবার রাত থেকে শুরু হয় ফারার সুনীল ত্রিপুরা কে খোঁজাখুঁজি। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর গভীর রাতে সুনীল ত্রিপুরা কে আটক করে ছিলাছড়ি থানার পুলিশ এবং রাতেই তাকে নিয়ে আসা হয় সাব্রুম মহাকুমার মনু থানাতে। পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা যায় আজ আদালতে প্রেরণ করা হবে সুনীল ত্রিপুরাকে।মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকারের জোর জেরার ফলে সুনীল শিকার করে সুন্দরমকে সে নিজে হাতে খুন করে।পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে খুনির জুতোসহ আরো একাধিক প্রমাণ। সুন্দরমকে খুনের আগে ধর্ষন করা হয়েছিলো কিনা তারজন্য সোয়াব কালেকশন করবে পুলিশ। তবে স্বজন হারা সুন্দরমের পরিবারের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠে যেন এই নরপিশাচকে অতিসত্বর ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে মহামান্য আদাল। তৎসঙ্গে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকার এবং গোটা পুলিশ টিমকে দারুন তৎপরতার সাথে খুনিকে খুঁজে বের করার জন্য বাহবা দেন এলাকাবাসী।