অস্ত্র তুলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন এনএলএফটি ও এটিটিএফের বৈরীরা*
নিজস্ব প্রতিনিধি :ত্রিপুরা : প্রিয়াংকা বনিক : ২৪ সেপ্টেম্বর
এনএলএফটি ও এটিটিএফ -এর বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ৫৮৪ জন সদস্য আত্মসমর্থনের মাধ্যমে মুল ধারায় ফিরে এসেছেন। আজ জম্পুইজলা স্থিত টিএসআরের ৭ নম্বর ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টারে একসঙ্গে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি দলের সদস্যরা। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা, রাজ্যের মুখ্য সচিব, ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক সহ প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক এবং নেতা-মন্ত্রী।দীর্ঘদিন ধরেই সশস্ত্র বিপ্লবের পথে হেঁটেছিলেন ওরা। যদিও সেই বিপ্লব অধরাই থেকে গিয়েছিল। অনেক সতীর্থই আগে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে সুখে-শান্তিতে ঘর-সংসার করছে।
সতীর্থদের সুখে জীবনযাপন করতে দেখে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন ওরা। শেষ পর্যন্ত হাতের অস্ত্র নামিয়ে রেখে বিপ্লবের পথ ছেড়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে চেয়ে আত্মসমর্পণভ করলেন ত্রিপুরার দুই জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (এনএলএফটি) ও অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্সের( এটিটিএফ) ৫০০ সশস্ত্র জঙ্গি।এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ভারত সরকার, ত্রিপুরা সরকার ও এনএলএফটি ও এটিটিএফের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ত্রিপুরায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এই প্রয়াসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরা এখন থেকে সম্পূর্ণ সন্ত্রাস মুক্ত রাজ্য হয়েছে। তাছাড়া, জনজাতিদের সার্বিক বিকাশের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার নানা রকম প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এদিন এনএলএফটি জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতা বিশ্ব মোহন দেববর্মা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে ভারত সরকার, ত্রিপুরা সরকার, ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা এবং অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে আজ এনএলএফটির ৩৮০ জন বৈরী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। এদিন তিনি ভারত সরকার, ত্রিপুরা সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, ত্রিপুরা পুলিশ, টিএসআর ও বিএসএফকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক আত্মসমর্পণকারী বৈরীদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এদিন তিনি বলেন, আজ এনএলএফটি ও এটিটিএফের জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যরা মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। তা ত্রিপুরা ও রাজ্য পুলিশের কাছে অন্তত গর্বের বিষয়। আজকের এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পর থেকে রাজ্যে শান্তি বজায় থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।১৯৯০ এর দশকে দুই জঙ্গি সংগঠন এনএলএফটি ও এটিটিএফের নাশকতামূলক কাজকর্মে অশান্ত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ত্রিপুরা। দুই সংগঠনের জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। মূলত যারা আদিবাসী নন, তারাই দুই সংগঠনের সদস্যদের হামলার শিকার হয়েছিলেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে। একের পরে এক জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছেন।
Post Comment