রাজ্য সরকারের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে জোলাইবাড়ী কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো আলু চাষ বিষয়ক এক বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এ কর্মশালার মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলু চাষের কৌশল শেখানো হয়, যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকদের আর্থিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কর্মকর্তারা।
জোলাইবাড়ী কৃষিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবছর মোট ৪৫০ জন আলু চাষীকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪০০ জন কৃষককে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি করে উন্নতমানের আলুর বীজ এবং ৫০ জন কৃষককে ৫০০টি করে আলুর চারা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেক কৃষককে আলু চাষে উৎসাহিত করতে সরকারিভাবে ৩,০০০ টাকা করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে
জোলাইবাড়ী কৃষিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক শ্রীদাম দাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, “গত বছরের তুলনায় এবছর আলু চাষীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কৃষকদের মধ্যে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের আগ্রহও বাড়ছে, যা কৃষিক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আলু চাষীদের ফলন বৃদ্ধি করে তাদের আয় দ্বিগুণ করা। এজন্য আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।”
চাষের মানোন্নয়নে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ.আর.সি (ARC) পদ্ধতির প্রশিক্ষণে। এই পদ্ধতিতে কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব, এবং মাটির উর্বরতা বজায় থাকে দীর্ঘদিন। কর্মশালায় প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে বীজ নির্বাচন, জমি প্রস্তুতি, রোগবালাই প্রতিরোধ, সার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
কর্মশালায় নাগীছড়াস্থিত কৃষি দপ্তরের কার্যালয় থেকে আগত দুইজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা চাষীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন এবং মাঠপর্যায়ের বাস্তব সমস্যাগুলোর সমাধান তুলে ধরেন। তাদের আলোচনায় উঠে আসে — সময়মতো সেচ দেওয়া, উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারের উপকারিতা, ও জৈব সার প্রয়োগের দীর্ঘমেয়াদি সুফল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
আজকের কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জোলাইবাড়ী ব্লকের বি.এস.সি চেয়ারম্যান অশোক মগ, পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান তাপস দত্ত, কৃষিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক শ্রীদাম দাস এবং এগ্রি স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রেসিডেন্ট জয়দেব দত্ত দাসসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষি কর্মকর্তারা। অতিথিরা কৃষকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, রাজ্য সরকার কৃষকদের পাশে আছে এবং তাদের উন্নয়নের জন্য নানা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।
অশোক মগ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “কৃষকই আমাদের দেশের মেরুদণ্ড। তাই কৃষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া এখন সময়ের দাবি। জোলাইবাড়ী কৃষি দপ্তরের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।” পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান তাপস দত্ত বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি কৃষক নিজের চাষে আত্মনির্ভর হোক। সরকার ও দপ্তরের সহায়তায় তা সম্ভব।”
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী কৃষকদের মধ্যে দেখা যায় প্রচুর উৎসাহ ও উদ্দীপনা। তারা জানান, এই ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় নতুন দিক খুলে দেয়। স্থানীয় এক কৃষক বলেন, “আগে আমরা প্রচলিত পদ্ধতিতেই চাষ করতাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, উন্নত জাতের বীজ ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফলন অনেক গুণ বাড়ানো সম্ভব।”
আরেকজন চাষী জানান, “সরকারি সহযোগিতা ও এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এবছর আগের চেয়ে অনেক বেশি ফলন হবে।” কৃষকদের এই ইতিবাচক মনোভাবই দপ্তরের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে শুধু আলু নয়, সবজি ও অন্যান্য অর্থকরী ফসলের ওপরও এমন প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি চাষের যাবতীয় ধাপ পর্যবেক্ষণ করে কৃষকদের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন তাঁরা।
শ্রীদাম দাস বলেন, “আমরা শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই থেমে যাচ্ছি না। চাষের প্রতিটি ধাপ পর্যবেক্ষণ করব, যাতে কৃষকরা বাস্তব সহায়তা পান। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য—‘কৃষকের আয় দ্বিগুণ’—এটিকে বাস্তবায়নের পথে জোলাইবাড়ী কৃষিদপ্তর প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।”
উপসংহার
দিনভর কর্মশালা শেষে কৃষকদের হাতে বীজ ও আর্থিক সহায়তার প্রতীকী বিতরণও করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল প্রাণবন্ত পরিবেশ। কৃষকদের মুখে ছিল আশার আলো—তারা বিশ্বাস করেন, এমন উদ্যোগ চলতে থাকলে তাদের জীবনে সত্যিই পরিবর্তন আসবে।
এটি কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরতার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রাজ্য সরকারের ‘আয় দ্বিগুণ’ কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের পথে জোলাইবাড়ী কৃষি দপ্তরের এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে।