
মোদীর হাত ধরেই উন্নয়নের পথে ত্রিপুরা ! দাবি করলেন বিপ্লব দেব
ত্রিপুরার রাজনৈতিক অঙ্গন ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল শনিবার। বনমালীপুর মণ্ডল আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত হয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব তীব্র আক্রমণ শানালেন বামেদের বিরুদ্ধে। তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরায় দীর্ঘ বাম শাসন ছিল রাজ্যবাসীর কাছে দুর্ভাগ্যের সমান। কারণ, বামেরা মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে সম্মান করেনি, বরং সবসময় তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।
এই জনসভায় বিপ্লব দেব ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, বিজেপির অন্যান্য জেলা ও রাজ্যস্তরের নেতৃত্বরা। শাসক দলের পক্ষ থেকে সভায় শ’য়ে শ’য়ে সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। উচ্ছ্বাসমুখর পরিবেশে শুরু হয় সভা, যেখানে একে একে নেতারা বক্তব্য রাখেন এবং আগামী দিনের রাজ্য রাজনীতির রূপরেখা তুলে ধরেন।
বিপ্লব দেব তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ত্রিপুরার বুকজুড়ে যে বাম শাসন চলেছে, তা ছিল রাজ্যবাসীর দুর্ভাগ্য। বামেরা কখনও মানুষের অনুভূতি বুঝতে শেখেনি, বরং সবসময় সেগুলিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।” তাঁর দাবি, বামফ্রন্টের আমলে উন্নয়নের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হতো, কিন্তু প্রকৃত অর্থে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কোনো কাজ হয়নি।
অন্যদিকে, বিজেপি সরকার নিয়ে তিনি বলেন, “গত সাড়ে সাত বছর ধরে বিজেপি মানুষের কল্যাণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ, আমাদের নেতৃত্ব স্বচ্ছ এবং মন পরিষ্কার। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি, অন্যদের মতো অকল্যাণের জন্য রাজনীতি করি না।”
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা। বিপ্লব দেব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি কেবল মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করেন। তাই তিনি মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে মাতা ত্রিপুরাসুন্দরীর মন্দির উদ্বোধনে আসছেন।”
সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল যে বিজেপি মানুষের আবেগ ও ধর্মীয় অনুভূতিকে গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, “যেখানে বামেরা মানুষের আবেগকে অবদমিত করেছিল, সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মানুষের আবেগকে সম্মান জানাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বেই ত্রিপুরা নতুন দিশা পাচ্ছে।”
সভায় প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “ত্রিপুরার উন্নয়ন, মানুষের কল্যাণ ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একমাত্র গ্যারান্টি বিজেপি। আমাদের সরকারের উদ্যোগে পরিকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য—সবক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, বিজেপি সরকার রাজ্যের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে চাইছে উন্নয়নের সুফল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই দলের প্রধান লক্ষ্য।
এই জনসভা মূলত একটি রাজনৈতিক বার্তাই দিয়েছে। সেটি হল—ত্রিপুরায় বিরোধীরা যতই সমালোচনা করুক, বিজেপি মানুষের সঙ্গে থেকে, তাঁদের আবেগকে সম্মান জানিয়ে পথ চলতে চায়। বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগকে সামনে রেখে আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে চাইছে বিজেপি।
বিপ্লব দেবের বক্তব্যে একদিকে যেমন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ল বাম শাসন, অন্যদিকে বিজেপির জনকল্যাণমূলক ভাবমূর্তিই মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল। মাতা ত্রিপুরাসুন্দরীর মন্দির উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে সামনে রেখে বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক বার্তা আরও জোরালো করতে চাইছে।