
ত্রিপুরায় চাঞ্চল্য : গোপন ছবি ব্ল্যাকমেল তারপর জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা
প্রতাপগড়ের অঞ্জলি সরকারকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধু এলাকাতেই নয়, উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। শনিবার দুপুরে এই ঘটনার ন্যায্য তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে পুলিশ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভে সামিল হয় সিপিআইএম। স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পুলিশের সঙ্গে বাম কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি শুরু হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বাম নেতা অমল চক্রবর্তী জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতাপগড়ে অঞ্জলি সরকার ও তাঁর স্বামীর ওপর একদল দুষ্কৃতী দোকানে চড়াও হয়। তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, অঞ্জলির কিছু গোপন ছবি ফাঁস করার হুমকি দিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল। পরিবারের দাবি, এ নিয়ে পুলিশের কাছে একাধিকবার খবর দেওয়া হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি।
অভিযোগ, থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরেও তাঁদের উপর দুষ্কৃতীদের নজরদারি ও হুমকি চলতেই থাকে। বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীরা তাঁদের আবারও আক্রমণ করার চেষ্টা করে। এর ঠিক পরদিন, অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয় বাজারে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় অঞ্জলি সরকারের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
অঞ্জলির স্বামী অভিযোগ করেছেন, লিটন দাস ও মান্না মজুমদারের নেতৃত্বেই এই হামলা এবং হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। বিশেষ করে মান্না মজুমদারের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। জানা গেছে, মান্না স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক জিতেন মজুমদারের ভাতিজা। এর ফলে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও তীব্র হয়েছে।
এই নির্মম ঘটনার পর থেকেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে সিপিআইএম। অমল চক্রবর্তী বলেন, “অঞ্জলি সরকারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। পুলিশকে বারবার জানানো সত্ত্বেও তারা নিরব দর্শক হয়ে থেকেছে। কারণ অভিযুক্তদের রাজনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, শুধু খুনই নয়, বিজেপি শাসনে সিপিআইএম বারবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। একাধিকবার দলীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। এমনকি গতকাল রাতেও প্রতাপগড়ে সিপিআইএম পার্টি অফিসে বুলডোজার চালানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে বিরোধীদের দমন করতে বিজেপি সরকার প্রশাসনকে হাতিয়ার করছে।
শনিবার বিকেলে এই ঘটনার প্রতিবাদে লাল পতাকা হাতে মিছিল করে পুলিশ সদর দফতরের সামনে পৌঁছান বাম নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা থাকলেও বিক্ষোভকারীরা আটকানো ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ।
সিপিআইএমের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ অকারণে তাদের বাধা দিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, অনুমতি ছাড়া হঠাৎ করে বিশাল জমায়েত করায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠেছিল, তাই কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনার পর রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে চরম তরজা। সিপিআইএমের দাবি, বিজেপি সরকারের আমলে অপরাধ বেড়ে চলেছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে ভয় দেখানো হচ্ছে।
অন্যদিকে বিজেপি শিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সিপিআইএম ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দিতে চাইছে। তাঁদের দাবি, দোষীদের আইনমাফিক শাস্তি হবে, কিন্তু বিক্ষোভের নামে অরাজকতা বরদাস্ত করা হবে না।
অঞ্জলি সরকারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত অপরাধ বাড়লেও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। তাঁদের বক্তব্য, দুষ্কৃতীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়া পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অঞ্জলি সরকারের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, সমগ্র সমাজের নিরাপত্তার প্রশ্নকে সামনে এনেছে।
অঞ্জলি সরকারের হত্যাকাণ্ড রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। একদিকে বিরোধীদের ক্ষোভ, অন্যদিকে শাসক দলের প্রতিরক্ষা—দুইয়ের মাঝে প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা। তদন্তে আসল সত্য প্রকাশ পাবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তবে আপাতত প্রতাপগড় থেকে পুলিশ সদর দফতর পর্যন্ত এই ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়েছে সর্বত্র।
দেখুন আজকের ত্রিপুরার বাছাই করা খবর
👇 ভিডিও লিঙ্কে ক্লিক করুন:
📢 ত্রিপুরার আরও খবর পেতে
👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন: https://www.youtube.com/@Tripura-news