
ত্রিপুরার বিশালগড় থানা এলাকায় আবারও বেআইনি চোলাই মদের বিরুদ্ধে বড়সড় পদক্ষেপ নিল পুলিশ। বুধবার দুপুরে পূর্ব চাম্পামুরা এলাকায় দুটি বাড়িতে হানা দিয়ে প্রায় ১৭০ লিটার দেশি চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি মদ তৈরির জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও উপকরণ ভেঙে গুড়িয়ে দেয় পুলিশ।
বিশালগড় থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরেই থানায় খবর আসছিল যে পূর্ব চাম্পামুরা এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে বেআইনি মদের ব্যবসা চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই মদ স্থানীয় যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নেশা বাড়াচ্ছে এবং সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করছে। অবশেষে বুধবার দুপুরে থানার ওসি বিজয় দাস গোপন সূত্রে খবর পান যে গৌরাঙ্গ শীল ও চন্দনা দেববর্মার বাড়ি থেকে দীর্ঘদিন ধরে দেশি চোলাই মদ তৈরি ও সরবরাহ করা হচ্ছে। খবরের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়।
ওসি বিজয় দাসের নির্দেশে সাব-ইন্সপেক্টর রামমোহন দেববর্মা ও এসিস্টেন্ট সাব-ইন্সপেক্টর অরুণ দেববর্মার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও টি এস আর বাহিনী অভিযানে নামে। বিশাল সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়ে অভিযানে গিয়ে তারা গৌরাঙ্গ শীল এবং চন্দনা দেববর্মার বাড়ি ঘিরে ফেলে। তল্লাশি চালিয়ে বাড়ি থেকে মোট ১৭০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার হয়। এছাড়াও, পচা ভাত ও মদ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করে সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়।
অভিযানের সময় চন্দনা দেববর্মা পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তার অভিযোগ ছিল, এডিসি এলাকার অনেকেই মদ তৈরি করছে, কিন্তু পুলিশ সেখানে কোনো অভিযান চালাচ্ছে না। বরং বারবার তার বাড়িতেই পুলিশ হানা দিচ্ছে। এই প্রসঙ্গে সাব-ইন্সপেক্টর রামমোহন দেববর্মা সাংবাদিকদের বলেন— “আমরা যেখানেই খবর পাই, সেখানেই অভিযান চালাই। এখানে তৈরি হওয়া মদ খেয়ে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। তাই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, গৌরাঙ্গ শীল ও চন্দনা দেববর্মার বিরুদ্ধে ত্রিপুরা এক্সাইজ আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা হবে। বেআইনি মদ উৎপাদন ও বিক্রি রুখতে পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান চালায়। পুলিশের দাবি, আগামী দিনেও তাদের এই অভিযান জারি থাকবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ধরনের দেশি চোলাই মদ শুধু যুব সমাজ নয়, মধ্যবয়সী অনেক মানুষের কাছেও সহজলভ্য। এতে তারা স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিতেও পড়ছেন। গ্রামীণ এলাকায় মদ ব্যবসা রমরমা হওয়ায় পরিবারে অশান্তি ও সামাজিক অপরাধও বাড়ছে। পুলিশের অভিযানে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের মতে, শুধু অভিযানে নয়, মদ তৈরি ও ব্যবসার মূল উৎস খুঁজে বের করা জরুরি।
সামাজিক গবেষকরা বলছেন, দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের অভাবই মূলত এই ব্যবসাকে টিকিয়ে রেখেছে। অনেক পরিবার টাকার জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ পথে হেঁটে যাচ্ছে। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি না করলে সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা কঠিন হবে।
বিশালগড় থানার ওসি বিজয় দাস বলেন, “আমরা নেশা বিরোধী অভিযানে কোনো আপস করবো না। যারা বেআইনি মদ তৈরি ও বিক্রি করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। যুব সমাজকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”
চোলাই মদের ব্যবসা ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকায় বহুদিনের সমস্যা। নিয়মিত অভিযানের পরেও পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে পুলিশের এই সক্রিয় উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং ধীরে ধীরে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলবে।