
ত্রিপুরা বিধানসভায় শুরুর পথে শরৎকালীন অধিবেশন পাস হবে অনেক বিল
আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ত্রিপুরা বিধানসভার শরৎকালীন অধিবেশন। দুর্গাপূজার আগে সীমিত সময়ের জন্য আয়োজিত এই অধিবেশন চলবে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সোমবার অনুষ্ঠিত বিজনেস অ্যাডভাইজারি কমিটি (বিএসি)-র বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রতন লাল নাথ।
মন্ত্রী জানান, ত্রিপুরার রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু এই অধিবেশন আহ্বান করেছেন। তবে বিধানসভার স্পিকার বিশ্ববন্ধু সেন বর্তমানে অসুস্থ থাকায় বিধি অনুযায়ী অধিবেশনের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব থাকছে ডেপুটি স্পিকার রামপ্রসাদ পালের ওপর।
বিজনেস অ্যাডভাইজারি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সোমবার। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী রতন লাল নাথ, মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, বিধায়ক রামপদ জামাতিয়া, মুখ্য সচেতন কল্যাণী, উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, বিরজিৎ সিনহা, অনিমেষ দেববর্মা প্রমুখ। যদিও বিরোধীদলীয় নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার পরিবর্তে সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে অন্য প্রতিনিধি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, দুর্গাপূজার সময় বিবেচনা করে অধিবেশনকে সংক্ষিপ্ত রাখা হয়েছে। কমিটির সর্বসম্মত মতামত অনুযায়ী অধিবেশন মাত্র দুই দিনের মধ্যে শেষ করা হবে।
১৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ অধিবেশনের প্রথম দিন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠতে চলেছে। সেদিন প্রশ্নোত্তর পর্বের পাশাপাশি চারটি সরকারি বিল এবং তিনটি প্রাইভেট মেম্বার রেজোলিউশন উত্থাপন করা হবে।
উত্থাপিত হতে যাওয়া বিলগুলি হলো:
ত্রিপুরা স্টেট গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স (সংশোধনী) বিল
ত্রিপুরা জন বিশ্বাস (সংশোধনী) বিল
ফ্যাক্টরিজ বিল
ত্রিপুরা শপস অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্টস (সংশোধনী) বিল
এছাড়াও, তিনটি প্রাইভেট মেম্বার রেজোলিউশন নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে প্রথম দিনেই। ফলে প্রথম দিনের অধিবেশন ব্যস্ত ও আলোচনাপূর্ণ হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
২৩ সেপ্টেম্বর, অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে মূলত পূর্বদিনে উত্থাপিত বিলগুলির ওপর বিস্তারিত আলোচনা হবে। পাশাপাশি বিল গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও এই অধিবেশন মাত্র দুই দিনের, তবুও তা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী বিল পাস করানো প্রয়োজন। বিশেষ করে জিএসটি সংশোধনী বিল এবং জন বিশ্বাস সংশোধনী বিল বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। অন্যদিকে, বিরোধীদলও প্রাইভেট মেম্বার রেজোলিউশনের মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রমকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে পারে।
ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই সংক্ষিপ্ত অধিবেশন একদিকে যেমন সরকারের কার্যক্রমকে আনুষ্ঠানিকতা দেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করবে, অন্যদিকে বিরোধীদেরও কিছুটা হলেও বক্তব্য তুলে ধরার মঞ্চ দেবে। তবে বিরোধীদলীয় নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীর অনুপস্থিতি ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক চর্চার জন্ম দিয়েছে।
ত্রিপুরায় দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং একটি সর্বজনীন সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। সেই কারণে শাসক ও বিরোধী— দুই পক্ষই চাইছে উৎসবের আবহ যেন রাজনীতির কারণে ভারাক্রান্ত না হয়। সম্ভবত এ কারণেই অধিবেশনকে দুই দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ত্রিপুরা বিধানসভার শরৎকালীন অধিবেশন যদিও সংক্ষিপ্ত, তবুও তাৎপর্যে ভরপুর। চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিল, তিনটি প্রাইভেট মেম্বার রেজোলিউশন এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব এই দুই দিনের অধিবেশনকে কার্যকরী ও আলোচনাপূর্ণ করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়—সরকার ও বিরোধীপক্ষ কীভাবে এই সীমিত সময়কে কাজে লাগিয়ে জনগণের স্বার্থে গঠনমূলক আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
📢 ত্রিপুরার আরও খবর পেতে
👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন: https://www.youtube.com/@Tripura-news