
ত্রিপুরায় হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার বারের লাইসেন্স বাতিল
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নিল একটি জনপ্রিয় বারকে কেন্দ্র করে। ‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’ নামের ওই বারের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আবগারি আইনের একাধিক শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতেই এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আবগারি কালেক্টর ডা. বিশাল কুমার।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতের দিকে। নিয়ম অনুযায়ী রাত ১১টার পর মদ পরিবেশন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে ওই রাতে রাত গভীর হলেও ‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’ বারে অবাধে মদ পরিবেশন চলছিল। শুধু তাই নয়, অনুমতি ছাড়াই ডিজে অনুষ্ঠান ও নাচগানের আয়োজন করা হয়, যা ধীরে ধীরে নাইট ক্লাবের আকার ধারণ করে।
এই বিষয়ে নজরদারি ফুটেজও পর্যালোচনা করেন জেলা প্রশাসন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় যে অভিযোগ সত্যি। অর্থাৎ, রাত ১১টার পরও পানাহার চলছিল এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়েছিল।
আজ সংবাদমাধ্যমকে মুখোমুখি হয়ে আবগারি কালেক্টর ডা. বিশাল কুমার বলেন—
“বারটির মালিক গৌতম দেবনাথ একাধিকবার আইন লঙ্ঘন করেছেন। শুধু তাই নয়, কর্মরত কর্মীদের তালিকা জমা দিতে বলা হলেও তা তিনি দেননি। এমনকি শো-কজ নোটিশ ইস্যু করার পরও তার কোনো উত্তর মেলেনি। এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই নিয়ম ভাঙছেন।”
‘ত্রিপুরা আবগারি আইন, ১৯৮৭’ অনুযায়ী, বার পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মানা বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমার পর মদ বিক্রি বন্ধ রাখা, কর্মীদের তথ্য দাখিল করা এবং লাইসেন্স শর্তাবলি কঠোরভাবে অনুসরণ করা অন্যতম। এই আইন ভঙ্গ করলে প্রশাসনের অধিকার রয়েছে লাইসেন্স বাতিল করার।
ডা. কুমার তার আদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন—
“ত্রিপুরা আবগারি আইন, ১৯৮৭-এর ধারা ৪০ (১)(গ) অনুযায়ী গৌতম দেবনাথের অনুকূলে জারি করা নং ৯৭ লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হলো।”
লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি বেশ কিছু নির্দেশও জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে –
বারের হাতে থাকা মদের মজুত দ্রুত জেলা আবগারি দপ্তরে জমা দিতে হবে।
মূল লাইসেন্স কাগজপত্র প্রশাসনের কাছে ফেরত দিতে হবে।
সিসিটিভি ফুটেজ ও এনভিআরও কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে।
প্রশাসন জানিয়েছে, এই নির্দেশ না মানলে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে নতুন করে মামলা দায়ের হবে এবং আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিও কার্যকর করা হবে।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় আলোচনার ঝড় ওঠে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, রাতবিরেতে বারে উচ্চ শব্দে ডিজে পার্টির কারণে এলাকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ সঠিক হয়েছে। তবে অন্যদিকে, নিয়ম মেনে চললে বারের কার্যক্রম জারি রাখা যেত, এতে কর্মীদের জীবিকাও বাঁচত।
ত্রিপুরায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নাইট লাইফ ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের মতে, সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে এবং সামাজিক নিরাপত্তার কারণে আইন মানা অপরিহার্য। ‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’ ঘটনার পর অনেক বার মালিকই নড়েচড়ে বসেছেন। অনেকে বলেছেন, এখন থেকে তারা আরও সতর্ক থাকবেন যাতে কোনো অভিযোগের মুখোমুখি না হতে হয়।
ত্রিপুরার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার বার
লাইসেন্স বাতিলের ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা শুরু হয়েছে। আগরতলার সাংস্কৃতিক পরিসর এবং তরুণ সমাজের মধ্যে নাইট লাইফের জনপ্রিয়তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে। অনেকের মতে, এই বারটি ত্রিপুরার উদীয়মান নাইট লাইফ সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠেছিল, যা একদিকে ব্যবসা ও বিনোদনের নতুন দিক খুলে দিয়েছিল, আবার অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক পরিবেশের জন্য উদ্বেগও তৈরি করেছিল। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ এই আলোচনাকে আরও উসকে দিয়েছে এবং এখন নজর সকলের—রাজ্যের অন্যান্য বার মালিকরা কীভাবে নিয়ম মেনে ব্যবসা চালান, তা দেখার দিকে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু শাস্তি নয়, প্রয়োজনে বার মালিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার যাতে তারা আইন মেনে ব্যবসা চালাতে শিখেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, রাজস্ব আয়ের জন্য বার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। তাই এখানে কড়াকড়ি থাকলেও শর্তাবলি বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।
‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’ বারের লাইসেন্স বাতিল নিঃসন্দেহে এক নজির স্থাপন করল। এই পদক্ষেপ একদিকে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানকে সামনে আনল, অন্যদিকে বার মালিকদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। এখন দেখার বিষয়, অন্য বারগুলো কতটা নিয়ম মেনে পরিচালিত হয় এবং প্রশাসন কেমন নজরদারি চালায়।