
ত্রিপুরার কিশোরী আরিয়া আঁকলেন লতা মঙ্গেশকরের অনন্য প্রতিকৃতি, নাম উঠল ইন্ডিয়ান বুক অফ রেকর্ডসে
তেলিয়ামুড়ার মাটিতে জন্ম নেওয়া এক কিশোরী শিল্পী আজ সমগ্র রাজ্যের গর্বের কারণ হয়ে উঠেছে। জয়নগরের বাসিন্দা এবং বর্তমানে আগরতলায় অধ্যয়নরত আরিয়া দেব সম্প্রতি অর্জন করেছে এক অসাধারণ সম্মান—ইন্ডিয়ান বুক অফ রেকর্ডে নিজের নাম নথিভুক্ত করেছে সে। কিংবদন্তি সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের এক অনবদ্য প্রতিকৃতি অঙ্কন করে আরিয়া এই বিরল সাফল্যের অধিকারী হয়।
আরিয়ার শৈশব কেটেছে তেলিয়ামুড়ার স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে করতে। খুব ছোটবেলা থেকেই খাতা-কলম কিংবা রঙ-তুলি হাতে পেলেই আঁকায় মগ্ন হয়ে যেত সে। পরিবার ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রথম থেকেই তার প্রতিভা লক্ষ্য করেছিলেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তেলিয়ামুড়ায় পড়াশোনা শেষে সে আগরতলার ভবন বিদ্যা মন্দিরে ভর্তি হয়। বর্তমানে আরিয়া ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আগরতলায় আসার পর সুযোগ-সুবিধা বেড়ে যায়, আর সেই সাথে আঁকার জগতে তার অনুশীলনও গভীরতর হয়।
বছরের পর বছর বিভিন্ন অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দক্ষতার প্রমাণ রেখেছে আরিয়া। একেকটি প্রতিযোগিতা তাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে, আবার নতুন কিছু শিখিয়েছে। ধীরে ধীরে তার আঁকায় নিখুঁততা যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি রঙ ব্যবহারে সৃজনশীলতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি সে একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে—নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লতা মঙ্গেশকরের প্রতিকৃতি আঁকা। কাজটি সহজ ছিল না। দেশের কোটি কোটি মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক কিংবদন্তি শিল্পীর চেহারার সূক্ষ্মতা ফুটিয়ে তোলা ছিল বড়সড় দায়িত্ব। কিন্তু আরিয়া নিখুঁতভাবে প্রতিটি রেখা, প্রতিটি অভিব্যক্তি ধরতে সক্ষম হয়। বিচারকরা তার এই কাজ দেখে মুগ্ধ হন। ফলস্বরূপ, আরিয়ার নাম নথিভুক্ত হয় ইন্ডিয়ান বুক অফ রেকর্ডে।
এই সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা তেলিয়ামুড়া আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, স্থানীয় বাসিন্দা—সবাই অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও জানান, আরিয়া অত্যন্ত মনোযোগী ও সৃজনশীল ছাত্রী। তারা বিশ্বাস করেন, একদিন সে দেশ-বিদেশে পরিচিত বড় মাপের শিল্পী হয়ে উঠবে।
আরিয়ার পরিবার তার এই কৃতিত্বে ভীষণ গর্বিত। পরিবারের সদস্যরা জানান, ছোটবেলা থেকেই তাকে আঁকার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় উপকরণ, প্রশিক্ষণ, এমনকি মানসিক শক্তিও পরিবার জুগিয়েছে। পরিবারের সমর্থন না থাকলে এ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হতো না—এমনটাই মনে করেন তার অভিভাবকরা।
আরিয়া নিজেও জানিয়েছে, চিত্রকলাই তার সবচেয়ে বড় আবেগ। পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকার জগতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের প্রতিভা দেখাতে চায় সে। তার লক্ষ্য, ভবিষ্যতে ভারতকে গর্বিত করার মতো একজন শিল্পী হয়ে ওঠা।
ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যের জন্য এ ধরনের সাফল্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আরিয়ার নাম উঠে আসায় রাজ্যের তরুণ-তরুণীদের কাছে নতুন প্রেরণা তৈরি হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন মহল আশা করছে, আরিয়ার হাত ধরে রাজ্য নতুনভাবে পরিচিতি পাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
তেলিয়ামুড়ার কন্যা আরিয়া দেবের এই অর্জন কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়; এটি তার পরিবার, শহর এবং সমগ্র রাজ্যের জন্য এক অনন্য গর্বের মুহূর্ত। শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাসই প্রমাণ করেছে—গ্রাম থেকে উঠে আসা এক কিশোরীও সমগ্র জাতির সামনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। আগামী দিনে আরিয়ার হাতে আরও বহু স্বীকৃতি ধরা দেবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সকলে।