
ত্রিপুরায় ই-মার্কেট চালু । কৃষি বাজারে বড় পরিবর্তন
কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও বাজার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যে রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চলেছে। কেন্দ্র সরকারের সহায়তায় রাজ্যের মোট ২১টি কৃষি বাজারকে ইলেকট্রনিক ন্যাশনাল এগ্রিকালচার মার্কেট (eNAM)-এর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কৃষকরা অনলাইনের মাধ্যমে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করতে পারবেন।
এই ঘোষণা করেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ। তিনি জানান, “আমাদের সরকার শুধু কৃষি উৎপাদন নয়, তার সঠিক বাজারজাতকরণের দিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষকদের হাতে ন্যায্য মূল্য তুলে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
মন্ত্রী ধলাই জেলার কুলাইয়ে নবনির্মিত বাজার এবং নোয়াগাঁও গ্রামে গ্রামীণ জ্ঞানকেন্দ্র-এর উদ্বোধন করেন। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকরা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও তথ্যের সুবিধা পাবেন।
মন্ত্রী বলেন, “গ্রামীণ স্তরে জ্ঞানকেন্দ্রগুলি কৃষকদের তথ্য-প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত করবে। এর মাধ্যমে চাষিরা আধুনিক কৃষি পদ্ধতি শিখতে পারবেন, যা উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে।”
রাজ্যে বর্তমানে মোট ৫৫৪টি কৃষি বাজার বিদ্যমান। এর মধ্যে ৮৪টি পাইকারি বাজার এবং ২১টি কৃষি উৎপাদন বাজার রয়েছে। কৃষিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের আগে গত সাত বছরে বাজার উন্নয়নের জন্য আগের সরকার যেখানে ২০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছিল, বর্তমান সরকার মাত্র সাত বছরে এই খাতে ৩০৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
মন্ত্রী স্পষ্ট করে জানান, “এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে আমরা কৃষকদের জন্য কতটা আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছি।”
২১টি বাজারকে ধাপে ধাপে ই-মার্কেটে যুক্ত করা হবে। প্রথম পর্যায়ে সাতটি বাজারকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেগুলো হলো:
পানিসাগর, পাবিয়াছড়া, কুলাই বাজার, তেলিয়ামুড়া, মোহনপুর, সোনামুড়া, শান্তিরবাজার
এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১২টি বাজারকে ই-মার্কেটের আওতায় আনা হবে। এগুলি হলো:
দশদা, বাছাইবাড়ি, কল্যাণপুর, চম্পকনগর, বিশালগড়, জম্পুইজলা, মেলাঘর, বড়পথারী, নতুন বাজার, গণ্ডা তুইষা, ছামনু
ইলেকট্রনিক মার্কেট চালু হলে কৃষকদের আর স্থানীয় বাজারের উপর নির্ভর করতে হবে না। তাঁরা বাড়ি বসেই তাঁদের পণ্যের ছবি, পরিমাণ ও মান নির্ধারণ করে অনলাইনে আপলোড করতে পারবেন। এরপর দেশের যেকোনো প্রান্তের ক্রেতা সেই পণ্য কিনতে পারবেন।
এর ফলে—
কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবেন।
দালালমুক্ত লেনদেন সম্ভব হবে। বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে, ফলে মূল্যও বাড়বে।
কৃষকের পণ্য সরাসরি ভোক্তা ও শিল্পকারখানায় পৌঁছাবে।
প্রতিটি নির্বাচিত বাজারে আধুনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে থাকছে—
প্রশাসনিক অফিস, নিলাম মঞ্চ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, দোকান ও গুদাম, ল্যাবরেটরি, গ্রেডিং ও বাছাই ব্যবস্থা, ডিজিটাল ওজন পরিমাপ যন্ত্র।
মন্ত্রী জানান, প্রথম পর্যায়ে সাতটি বাজার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র সরকার থেকে ইতিমধ্যেই ২.১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র উৎপাদন নয়, বরং কৃষকের আয় দ্বিগুণ করা। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল শিল্পপণ্যের মতোই বাজারজাত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, কারণ উন্নয়ন ও অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগামী দিনে কৃষক কল্যাণ প্রকল্পে সরকার আরও বেশি বিনিয়োগ করবে, যাতে প্রত্যেক কৃষক ডিজিটাল সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।
রাজ্যের ২১টি কৃষি বাজার ই-মার্কেটে যুক্ত হলে একদিকে যেমন কৃষকদের আয়ের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে, তেমনি রাজ্যের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাজারে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়বে, দালালচক্র ভাঙবে এবং কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পাবেন।
সরকারি পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দিচ্ছে, কৃষকদের উন্নয়ন আর শুধুই কাগজে নয়, বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে। কৃষি আধুনিকীকরণের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে রাজ্যের কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
👉 আরও ভিডিও ও লাইভ আপডেট দেখতে ভিজিট করুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেল:
Tripura News YouTube
✨ সাবস্ক্রাইব করুন এখনই এবং প্রতিদিনের খবর পান সবার আগে।