
ভোটার তালিকা কারচুপির অভিযোগে ত্রিপুরাজুড়ে আন্দোলনে কংগ্রেস
ত্রিপুরায় আসন্ন দিনগুলোতে উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহ তৈরি হতে চলেছে। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা নিয়ে কারচুপির অভিযোগ তুলে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। সোমবার আগরতলায় প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় সভাপতি আশিষ কুমার সাহা জানান, দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করার চেষ্টা চলছে। আর সেই প্রয়াসে নির্বাচন কমিশনও শাসক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাংবিধানিক অধিকার খর্বের অভিযোগ কংগ্রেসের
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দাবি, মানুষের ভোটাধিকারকে পরিকল্পিতভাবে হরণ করার চেষ্টা করছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার। তার ভাষায়, “সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোটাধিকার হরণে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। এটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক ইঙ্গিত।”
তিনি আরও জানান, কংগ্রেস এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গোটা দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করেছে। তারই অঙ্গ হিসেবে ত্রিপুরাতেও লাগাতার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যজুড়ে কর্মসূচির রূপরেখা
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিষ কুমার সাহা ঘোষণা করেন, আগামী ২২ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত “ভোট চোর মোদি চোর” কর্মসূচি রাজ্যের নয়টি জেলা সহ রাজধানী আগরতলায় অনুষ্ঠিত হবে।
২২ আগস্ট: কর্মসূচি শুরু হবে উদয়পুর থেকে।
৩০ আগস্ট: আগরতলা শহরে রাজ্যভিত্তিক মহামিছিল আয়োজন করা হবে।
তিনি জানান, সারা রাজ্যের জেলা ও ব্লক স্তরের নেতাকর্মীরা আগরতলার মূল মিছিলে যোগ দেবেন। রাজ্যের প্রতিটি বড় শহরে প্রতিবাদী কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আশিষ কুমার সাহা অভিযোগ করেন, ২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার নির্বাচনে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। অর্থবল ও বাহুবল ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তার ভাষায়, “এতদিন পর এসে নির্বাচন কমিশনকে প্রায় শাসক দলের শাখা সংগঠনে রূপান্তর করার চেষ্টা চলছে। এবার সরাসরি ভোটার তালিকা থেকে বৈধ ভোটারদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। ত্রিপুরায় কোন বৈধ ভোটারকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করতে দেওয়া হবে না।”
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিষ কুমার সাহার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন—
প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি নীলকমল সাহা ও
তাঁরা একযোগে দাবি করেন, কংগ্রেস মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আশিষ কুমার সাহা উল্লেখ করেন, সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও বারবার বলেছেন— ২০১৪ সাল থেকে বিজেপি সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিকৃত করার চেষ্টা করছে। প্রশাসন, অর্থশক্তি ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রচেষ্টা চলছে। এবার সেই প্রয়াসের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে কার্যত শাসক দলের হাতের পুতুলে পরিণত করা হচ্ছে।
রাজ্য কংগ্রেসের এই কর্মসূচি ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে রাজ্যের রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ মিছিল, সভা ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কংগ্রেস তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চাইছে। বিশেষ করে ৩০ আগস্ট আগরতলার মহামিছিল রাজ্যের রাজনীতিতে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভোটার তালিকা নিয়ে কারচুপির অভিযোগ ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে। এই আবহেই ত্রিপুরা কংগ্রেসের রাজ্যব্যাপী কর্মসূচি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ময়দানে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখন দেখার বিষয়, এই আন্দোলন রাজ্যের ভোট রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলে।