
ত্রিপুরায় পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্রের বিশেষ নজর
ত্রিপুরায় পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত লোকসভায় জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে ত্রিপুরার জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে পর্যটন বিকাশ এবং স্থানীয় জীবিকার উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রথম ধাপে আগরতলা, সিপাহিজলা, মেলাঘর, উদয়পুর, অমরপুর, তীর্থমুখ, মন্দিরঘাট, ডুম্বর, নারিকেলকুঞ্জ, গণ্ডাছড়া এবং আমবাসা—এই স্থানগুলির পর্যটন উন্নয়নে বরাদ্দ করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে বলে মন্ত্রক জানিয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে আরও ৪৪.৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেই অর্থে সুরমা, ঊনকোটি, জম্পুই পাহাড়, গুণবতী, ভূবনেশ্বরী মন্দির, নীরমহল, বক্সনগর, চোত্তাখোলা, পিলাক ও আভাংছড়া এলাকার উন্নয়ন করা হয়। এ ক্ষেত্রেও সব কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
পর্যটন মন্ত্রকের নতুন প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘প্রধানমন্ত্রী-যুগা হোমস্টে উদ্যোগ’। এই প্রকল্পে লক্ষ্য রাখা হয়েছে জনজাতীয় অঞ্চলে এক হাজার হোমস্টে গড়ে তোলার। প্রতিটি পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তার পরিকল্পনা করা হয়েছে—
নতুন করে দুটি কক্ষ নির্মাণে ৫ লক্ষ টাকা,
বিদ্যমান কক্ষ সংস্কারে ৩ লক্ষ টাকা,
এবং প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক সহায়তার জন্য আরও ৫ লক্ষ টাকা।
এর পাশাপাশি হোমস্টে মালিকদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থাও থাকবে। মূল লক্ষ্য হল টেকসই পর্যটনকে উৎসাহিত করা এবং স্থানীয়দের জীবিকার নতুন সুযোগ তৈরি করা। তবে এখন পর্যন্ত এই উদ্যোগে কোনও অর্থ বিতরণ করা হয়নি বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
দক্ষ পর্যটন গাইড তৈরিতে ডিজিটাল উদ্যোগ
পর্যটন মন্ত্রকের আরেকটি উদ্যোগ হল ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া ট্যুরিস্ট ফ্যাসিলিটেটর (IITF) সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম’। এই ডিজিটাল কোর্সে অংশ নিয়ে আগ্রহীরা পর্যটন গাইড হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তপশিলী জাতি ও তপশিলী জনজাতি প্রার্থীদের জন্য ফি ছাড়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।
কোর্সে রয়েছে—
মৌলিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণ,
উন্নত স্তরের ঐতিহ্য ও অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন কোর্স,
কথ্য ভাষা শিক্ষার সুযোগ,
এবং রিফ্রেশার কোর্স।
এভাবে একটি দক্ষ ও পেশাদার পর্যটন ফ্যাসিলিটেটরদের দল গড়ে তোলা হচ্ছে, যারা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।
ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং পর্যটন সম্ভাবনাকে সামনে আনার জন্য গত পাঁচ বছর ধরে মন্ত্রকের ডিপিপিএইচ প্রকল্প-এর আওতায় একাধিক মেলা ও উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতিই নয়, পর্যটন শিল্পও বাড়তি চাহিদা তৈরি করেছে।
মন্ত্রী শেখাওয়াত জানান, পর্যটন উন্নয়নের পাশাপাশি মূল লক্ষ্য হল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা উন্নত করা। এজন্য অবকাঠামো বিনিয়োগ, প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা ও প্রচার—সব দিক থেকেই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম, ওয়েবসাইট এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভারতের পর্যটন গন্তব্যগুলিকে আরও বেশি প্রচারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের সাংসদ কৃতি সিং দেববর্মণের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী। কেন্দ্রের দাবি, ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পগুলি রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে আসল চ্যালেঞ্জ এখন টেকসইভাবে এই প্রকল্পগুলির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
ত্রিপুরার ভৌগোলিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন এবং জনজাতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্প রাজ্যের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্যটন মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বলেই আশা করা হচ্ছে।