
ত্রিপুরায় কোটা ভিত্তিক ডাক্তার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক
ত্রিপুরা রাজ্যে সম্প্রতি প্রকাশিত ২১৬ জন জেনারেল মেডিক্যাল অফিসার (GMO) নিয়োগের মেধা তালিকা নিয়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (TPSC) কর্তৃক প্রকাশিত এই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, সাধারণ কোটার অনেক প্রার্থী ৬০% বা তার বেশি নম্বর অর্জন করলেও, তফশিলি উপজাতি (ST) কোটার কিছু প্রার্থী মাত্র ১৪–২০ নম্বর পেয়েও সমান মর্যাদার পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য পরিষেবা এমন একটি সংবেদনশীল ক্ষেত্র, যেখানে ডাক্তারদের সামান্য গাফিলতিও রোগীর জীবন-মৃত্যুর সীমারেখা নির্ধারণ করে দিতে পারে। এ কারণে অনেকের মতে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা ভিত্তিক নির্বাচনে পরীক্ষার ফলাফলের পার্থক্য এতটাই স্পষ্ট যে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের বহু মানুষ।
মেধা তালিকায় সর্বোচ্চ প্রার্থী ৮৩.৯৫ নম্বর পেয়েছেন। ২১৬ জনের মধ্যে প্রায় ৭০ জন ৬০% এর বেশি নম্বর অর্জন করেছেন। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়, একই তালিকায় রয়েছেন ১৪, ১৫, কিংবা ২০ নম্বর পাওয়া প্রার্থীও—যারা কোটা সুবিধার মাধ্যমে একই পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—মাত্র ১৪ বা ১৫ নম্বর পাওয়া কেউ যদি চিকিৎসকের দায়িত্ব পান, তবে তাঁর জ্ঞান ও দক্ষতার মান কেমন হবে? রোগ নির্ণয়, সঠিক ওষুধ প্রয়োগ, কিংবা শল্য চিকিৎসার মতো জটিল কাজে তাঁরা কতটা সক্ষম হবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
এই পরিস্থিতিতে অনেকের দাবি, রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায়, যেখানে অধিকাংশ নিয়োগপ্রাপ্ত GMO পাঠানো হয়, সেখানে চিকিৎসার মান অনেকটাই নির্ভর করবে এই নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের উপর।
এটি প্রথমবার নয় যে ত্রিপুরা বা ভারতের অন্যান্য রাজ্যে কোটা সংস্কার নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। বহুবারই অভিযোগ উঠেছে, কোটা পদ্ধতি প্রকৃত মেধাবীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সাধারণ কোটা প্রার্থী চাকরি পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ন্যূনতম নম্বর পেয়েও কেউ কেউ উচ্চপদে বসছেন।
তবে অন্য একটি অংশের মত, কোটা ব্যবস্থা সামাজিক ও ঐতিহাসিক বৈষম্য কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তাদের মতে, নম্বরই মেধার একমাত্র মানদণ্ড নয়—পরিবেশ, সুযোগ এবং আর্থসামাজিক পটভূমিও একজনের সক্ষমতা নির্ধারণ করে।
প্রভাতি সংবাদপত্রগুলো থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত এই বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই TPSC ও স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে জানতে চাইছেন—যদি আগামী দিনে কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত ভুলের কারণে প্রাণহানি ঘটে, তবে এর দায়ভার কে নেবে?
বর্তমানে এই নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে চাপান-উতোর অব্যাহত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিতর্কের মূলে আছে একটি বৃহত্তর প্রশ্ন—মেধা ও সমান সুযোগের ভারসাম্য রক্ষা করে কিভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ রাখা যায়।
ত্রিপুরার স্বাস্থ্য দপ্তরের জন্য এই ঘটনা একটি সতর্কবার্তা হতে পারে—যেখানে শুধু নিয়োগ নয়, ভবিষ্যৎ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে প্রতিটি চিকিৎসক, তাঁর নম্বর যাই হোক না কেন, রোগীর জীবনের প্রতি সমান দায়িত্বশীল ও যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন।