
হরিয়ানার পানিপথ জেলার বুয়ানা লাখু গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে প্রায় তিন বছরের টানাপোড়েন অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নিষ্পত্তি পেল। ভোট পুনর্গণনার পর বদলে গেল ২০২২ সালের নির্বাচনের ফলাফল—বিজয়ী হলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোহিত কুমার।
এটি দেশের ইতিহাসে বিরল নজির, কারণ এই প্রথম ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সরাসরি ভোট পুনর্গণনার নির্দেশ দিয়েছে এবং নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তা সম্পন্ন করিয়েছে।
২০২২ সালের ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথমে কুলদীপ সিংকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী মোহিত কুমারের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন বলে ফলাফল প্রকাশিত হয়।
কিন্তু ফলাফলে অসন্তুষ্ট মোহিত কুমার ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে পানিপথের অতিরিক্ত সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন)-সহ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানান। তার অভিযোগ—নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে, বিশেষ করে বুথ নম্বর ৬৯-এ ভোট গণনায় গড়মিল রয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ মে নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল মোহিত কুমারের অভিযোগ আংশিকভাবে মেনে নিয়ে শুধুমাত্র বুথ নম্বর ৬৯-এর ভোট পুনর্গণনার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু জুলাই মাসে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট সেই নির্দেশ বাতিল করে দেয়। এরপর মোহিত কুমার বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।
৩১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়—শুধু বিতর্কিত বুথ নয়, বরং নির্বাচনে ব্যবহৃত সব বুথের ভোট পুনর্গণনার নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ ছিল—
২০২৫ সালের ৬ আগস্ট সকাল ১০টার মধ্যে সমস্ত ইভিএম সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে হাজির করতে হবে।
মনোনীত রেজিস্ট্রার সব বুথের ভোট পুনর্গণনা করবেন।
পুরো প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি হবে।উভয় প্রার্থী বা তাঁদের অনুমোদিত প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওএসডি (রেজিস্ট্রার) কাবেরী মোট ৩,৭৬৭টি ভোট পুনর্গণনা করেন। ফলাফলে দেখা যায়—
মোহিত কুমার: ১,০৫১ ভোট
কুলদীপ সিং: ১,০০০ ভোট
এতে পরিষ্কার হয়, মোহিত কুমারই আসল বিজয়ী।
১১ আগস্ট বিচারপতি সুর্যকান্ত, দীপঙ্কর দত্ত ও এন. কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ জানায়—
“ওএসডি (রেজিস্ট্রার)-এর প্রতিবেদনে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। পুরো প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফ করা হয়েছে এবং উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা তাতে স্বাক্ষর করেছেন। আমরা সন্তুষ্ট যে, মোহিত কুমারকেই ২০২২ সালের বুয়ানা লাখু গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সরপঞ্চ ঘোষণা করা উচিত।”
আদালত পানিপথের ডেপুটি কমিশনার-কাম-নির্বাচন অফিসারকে নির্দেশ দেয়, দুই দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে মোহিত কুমারকে সরপঞ্চ ঘোষণা করতে হবে এবং তিনি অবিলম্বে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।
যদিও ফলাফল বদলে গেছে, সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে—পক্ষগুলি চাইলে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে বাকি আইনি প্রশ্নগুলি উত্থাপন করতে পারে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এই মামলায় অন্য বিষয়ে আইনি লড়াই চলতে পারে।
ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে এই রায় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত ভোট পুনর্গণনার নির্দেশ আসে নির্বাচন কমিশন বা স্থানীয় আদালত থেকে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং নিজস্ব তত্ত্বাবধানে গণনা নজিরবিহীন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতে বিতর্কিত স্থানীয় নির্বাচন মামলায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বুয়ানা লাখু গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচন বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত শুধু একজন প্রার্থীর জয়ই নিশ্চিত করেনি, বরং ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আইনের শীর্ষস্তরের সক্রিয় ভূমিকারও উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।