
ত্রিপুরায় বৈদ্যুতিক ট্রেন পরিষেবা চালুর পথে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। বুধবার গোমতী জেলার উদয়পুর রেল স্টেশনের রেলওয়ে ট্র্যাক সাবস্টেশনকে বনদুয়ার এলাকার ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করেছে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম (TSECL)। এর ফলে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের (NFR) উদ্যোগে রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিদ্যুৎচালিত রেল পরিষেবা সম্প্রসারণের পথ সুগম হলো।
ডিজেল থেকে বিদ্যুতে যাত্রা
বর্তমানে উদয়পুর পর্যন্ত ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু এই নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের ফলে উদয়পুর হয়ে ঐতিহাসিক ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন মাতাবাড়ি রেল স্টেশন পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনের পর প্রয়োজনীয় রেলওয়ে টেস্ট সম্পন্ন হলেই বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভ চলাচল শুরু হবে।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়ায় এক বিশেষ ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২১ বগির একটি মালগাড়ি আসামের বদরপুর থেকে এসে জিরানিয়ায় পৌঁছায়। এই সফল পরীক্ষা ত্রিপুরায় বৈদ্যুতিক রেল পরিষেবা চালুর পথে একটি বড় আস্থা যোগায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের মেগা প্রকল্প
২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ৪৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হাতে নেয়, যার মাধ্যমে ত্রিপুরাকে জাতীয় রেলওয়ে বৈদ্যুতিক গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম নিজস্ব বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে রেলওয়েকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, যাতে ডিজেলের উপর নির্ভরতা কমে এবং পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
উদয়পুরে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনকে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছে স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ। তবে উদয়পুরের দক্ষিণে শান্তিরবাজার, বিলোনিয়া ও সাবরুম পর্যন্ত এখনো ডিজেল লোকোমোটিভ দিয়েই ট্রেন চলাচল করছে। আগামী দিনে এই এলাকাগুলোতেও বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এখন আগরতলা থেকে কলকাতা, গুয়াহাটি, দিল্লি, বেঙ্গালুরুসহ দেশের বড় শহরগুলিতে দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন ও মালগাড়ি চলাচল করে। বিদ্যুতায়ন সম্পূর্ণ হলে শুধু যাত্রী পরিষেবার মান বাড়বে না, মালবাহী পরিবহনও দ্রুত এবং খরচ-সাশ্রয়ী হবে।
বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু হলে ভ্রমণ সময় কমবে, দূষণ হ্রাস পাবে এবং রেল চলাচলের গতি ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ত্রিপুরার পরিবহন ও বাণিজ্যিক অবকাঠামো উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।
ত্রিপুরার উদয়পুরে এই বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যক্রম শুধু একটি প্রযুক্তিগত অর্জন নয়, বরং রাজ্যের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব করার পথে দৃঢ় পদক্ষেপ।