
আন্তর্জাতিক যুব দিবসকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরা সরকার এইচআইভি ও এইডস প্রতিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মঙ্গলবার আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে “সচেতনতা ঘণ্টা” নামে এক বিশেষ কর্মসূচির উদ্বোধন হয়, যার লক্ষ্য স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে সঠিক তথ্য এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়া।
এই উদ্যোগের মূল আয়োজক ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, যিনি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই এইডস সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, নেশাজাত দ্রব্যের অপব্যবহার এইডস সংক্রমণের অন্যতম বড় কারণ। তিনি জানান, রাজ্য সরকার মাদক চক্র ভাঙতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং রাজ্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে অভিযুক্তদের কোনোভাবে ছাড়া না হয়। ডা. সাহা মনে করিয়ে দেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয়—সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলাও সমান জরুরি।
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই উদ্যোগের অন্যতম প্রধান অংশীদার। তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিদিন ক্লাসে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এইডস ও এইচআইভি নিয়ে আলোচনা করতে। শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান, লজ্জা বা দ্বিধা না করে খোলাখুলি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে, যাতে ভুল ধারণা দূর হয় এবং সঠিক তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
ডা. সাহা অভিভাবকদেরও সতর্ক করে দেন সন্তানদের চলাফেরা ও বন্ধুত্বের পরিবেশ নিয়ে সচেতন থাকার জন্য। তিনি বলেন, ভালো ছাত্রছাত্রীরাও অনেক সময় ভুল বন্ধুত্ব বা পরিবেশের কারণে বিপথে চলে যায়। তাই অভিভাবক পর্যায়ে নজরদারি বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, “নেশামুক্ত ত্রিপুরা” ও “এইচআইভি মুক্ত রাজ্য” গড়তে হলে শুধু সরকারি প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়—সবার মিলিত অংশগ্রহণ দরকার। পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, তবে শিক্ষাবিদ, স্বাস্থ্যকর্মী, অভিভাবক ও স্থানীয় সমাজকর্মীদের একযোগে কাজ করতেই হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা তপন মজুমদার, আধিকারিক সাজু ওহাদি সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা সবাই একমত হন যে, নিয়মিত সচেতনতা ও শিক্ষার মাধ্যমেই এইচআইভি সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।
ত্রিপুরা সরকারের এই উদ্যোগ কেবল একটি স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি নয়, বরং এক প্রজন্মকে সঠিক পথে রাখার সামাজিক আন্দোলন। বিদ্যালয়ে নিয়মিত আলোচনা, পরিবারে নজরদারি এবং মাদক বিরোধী কঠোর পদক্ষেপ মিলিয়ে ত্রিপুরা হয়তো আগামী দিনে এইচআইভি মুক্ত রাজ্যের উদাহরণ তৈরি করতে পারবে।