
আগরতলা, ৮ আগস্ট ২০২৫
ভারতের কৃষি খাত নতুন এক রূপান্তরের পথে, আর এই পরিবর্তনের ঢেউ ত্রিপুরাকেও স্পর্শ করতে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী ২০২৫-২০৩০ সময়কালে কিছু উচ্চ-চাহিদাযুক্ত ফসল দেশের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে, যা ত্রিপুরার কৃষকদের জন্যও নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ বয়ে আনবে।
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত এই ফসলগুলির মধ্যে রয়েছে — জৈব শাকসবজি, কেশর, আম-কল-পেয়ারা, মশলা এবং অ্যালোভেরা। এদের মধ্যে বেশ কিছু ফসল ত্রিপুরার আবহাওয়া ও মাটির সাথে খাপ খায়, আবার কিছু ফসলের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন হবে।
ত্রিপুরায় ব্রকোলি, বাঁধাকপি, টমেটো, ও পালং শাকের মতো শাকসবজি ইতিমধ্যেই চাষ হয়। সরকারি উদ্যোগে যদি জৈব কৃষি পদ্ধতি ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থার প্রসার ঘটে, তবে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারে এর ভালো দাম পাওয়া সম্ভব।
কেশর চাষের সম্ভাবনা
যদিও কেশর মূলত জম্মু ও কাশ্মীরে উৎপাদিত হয়, তবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ কৃষি (CEA) ও হাইড্রোপনিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ত্রিপুরায় পরীক্ষামূলক চাষ সম্ভব। এতে উচ্চমূল্যের এই মশলার ছোট পরিসরে উৎপাদন শুরু হতে পারে।
আম, কলা, পেয়ারা
ত্রিপুরার দক্ষিণাঞ্চলে ও গোমতী জেলায় আম ও পেয়ারা চাষ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়। উন্নত জাতের কলা চাষে রপ্তানি বাজারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে।
মশলা (হলুদ, আদা, এলাচ)
ত্রিপুরা বহুদিন ধরেই আদা ও হলুদ উৎপাদনে পরিচিত। এগুলিকে জৈবভাবে উৎপাদন করে প্যাকেটজাত করলে ভারতের বাইরে ও দেশের বড় শহরগুলোতে রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়বে।
অ্যালোভেরা
রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় অ্যালোভেরা চাষের জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। প্রসাধনী ও স্বাস্থ্যপণ্যের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক চাষ কৃষকদের আয় বাড়াতে পারে।
এই উচ্চ-চাহিদাযুক্ত ফসলগুলির দিকে ঝুঁকলে ত্রিপুরার কৃষকরা শুধু ফসলের দামেই লাভবান হবেন না, বরং কৃষি-ভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত শিল্প এবং রপ্তানি বাণিজ্য থেকে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহও বাড়তে পারে।
তবে চ্যালেঞ্জও আছে—
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের অভাব
কৃষিপণ্যের সঠিক বাজারে পৌঁছানোর সীমাবদ্ধতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রিপুরা সরকার যদি জৈব সার্টিফিকেশন, কৃষি-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এবং রপ্তানি অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়, তবে এই ফসলগুলি আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যের কৃষি আয় ও অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারবে।
সংক্ষেপে, ভারতের উচ্চ-চাহিদাযুক্ত ফসলের ঢেউ ত্রিপুরার কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে—যদি প্রযুক্তি, বাজার ও সরকারি সহায়তার সঠিক সমন্বয় ঘটে।