
বিশ্রামগঞ্জ, ত্রিপুরা:
ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার বিশ্রামগঞ্জে যাত্রীবাহী একটি বাসে এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় একদিকে জনতার বিক্ষোভ, অন্যদিকে ব্যাপক ভাঙচুর ও হিংসাত্মক পরিস্থিতির সাক্ষী হয় গোটা এলাকা। ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে বিশালগড়ের চন্দ্রনগরের বাসিন্দা সুকুমার বণিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, আগরতলা থেকে বিশ্রামগঞ্জ বাসে যাত্রা করছিলেন জেসিকা দেববর্মা নামের এক তরুণী। অভিযোগ, চলন্ত বাসে তাঁর এক সহযাত্রী অশালীন আচরণ করেন। বিষয়টি বাস কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তরুণী ফোনে তাঁর ভাইকে বিষয়টি জানান। বাসটি বিশ্রামগঞ্জ বাজারে পৌঁছাতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বিক্ষোভ ও হিংসা
স্থানীয় কিছু যুবক বাস থামার সঙ্গে সঙ্গেই চালক ও কন্ডাক্টরের উপর চড়াও হন। এরপর যাত্রীদের উপর চলে মারধর। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা কাউকে ছাড়েনি – বয়স, লিঙ্গ বা পরিচয়ের তোয়াক্কা না করে চলে হামলা। বাসের জানালা, দরজা, আসন ভাঙচুর করা হয়। আতঙ্কে বহু যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার খবর পেয়ে বিশ্রামগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও প্রথমে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে বিশালগড়, মধুপুর, টাকারজলা থানা এবং টিএসআর বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি ঠেকাতে টিএসআরকে লাঠিচার্জও করতে হয়।
আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তরুণীকেও চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। শুরুতে অভিযুক্তের পরিচয় অস্পষ্ট থাকলেও, পরে পুলিশ সুকুমার বণিককে গ্রেপ্তার করে। তবে তদন্তকারীদের মতে, এখনও আরও তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি প্রয়োজন।
ঘটনার পর বাঙালি ও জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিছু যাত্রী দাবি করেছেন, বাঙালি হওয়ায় তাঁরা নির্দিষ্টভাবে টার্গেট হয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে কিছু উগ্র গোষ্ঠী ঘটনার একপাক্ষিক প্রচারে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ।
ঘটনার পর বিশ্রামগঞ্জে ১৬৩ ধারা জারি করা হয় এবং অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়। আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) ও জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে এবং তদন্ত জোরকদমে চলছে।
ঘটনাটি নারী নিরাপত্তা এবং জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয়দের দাবি, দোষী যেই হোক, তাঁকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনানুগ শাস্তি দিতে হবে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহল ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনের দুর্বলতা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে সমাজ ও প্রশাসনের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি, যেন কোনো নিরীহ মানুষ অবিচারের শিকার না হন এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় থাকে।