
ত্রিপুরা | ৬ আগস্ট ২০২৫ —
ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার বিশ্রামগঞ্জ এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে মঙ্গলবার রাতে ঘটে অশান্তির ঘটনা। অভিযোগের সূত্র ধরে জনতার বিক্ষোভ এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যে, বাসে ব্যাপক ভাঙচুর, যাত্রীদের মারধর এবং জনপদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়।প্রাথমিক সূত্রে জানা গেছে, জনজাতি সম্প্রদায়ের জেসিকা দেববর্মা নামের এক তরুণী গুয়াহাটি থেকে আগরতলাগামী বাসে বিশ্রামগঞ্জের দিকে যাত্রা করছিলেন। অভিযোগ, চলন্ত বাসে তাঁর এক সহযাত্রী অশালীন আচরণ করেন। তরুণী কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সরাসরি তাঁর ভাইকে ফোন করে বিষয়টি জানান।বাসটি বিশ্রামগঞ্জ বাজারে পৌঁছালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু যুবক বাস থামার সঙ্গে সঙ্গেই কন্টাক্টর ও চালকের উপর আক্রমণ চালান। এরপর বাসে থাকা যাত্রীদেরও লক্ষ্য করে চলে নির্বিচার মারধর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা বয়স, লিঙ্গ বা পরিচয়ের তোয়াক্কা না করেই হামলা চালায়।ভাঙচুর হয় বাসের জানালা, দরজা, আসনসহ নানা অংশ। আতঙ্কে বহু যাত্রী চিৎকার করে ওঠেন, কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন।প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নবাসে হামলার খবর পেয়ে বিশ্রামগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও প্রথমে তারা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে বিশালগড়, মধুপুর ও টাকারজলা থানা থেকে অতিরিক্ত বাহিনী এবং টিএসআর জওয়ান এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। টিএসআর বাহিনীকে লাঠিচার্জ করতেও হয়।আহত ও তদন্তের অগ্রগতিআহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তরুণীকেও চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। বাসের অন্যান্য যাত্রী এবং স্টাফরাও দোষীর পরিচয় নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি।এই পরিস্থিতি ঘিরে বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ ঘটনাটিকে পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন, আবার কারও মতে এটি একটি ভুল বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে উগ্র প্রতিক্রিয়ার ফল।সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সম্ভাবনাঘটনার পর জনজাতি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, বাঙালি হওয়ায় তারা বিশেষভাবে টার্গেট হয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমেও কিছু উগ্র গোষ্ঠী একপাক্ষিক প্রচারের মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে খবর।প্রশাসনের প্রতিক্রিয়াঘটনার পর বিশ্রামগঞ্জে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) ও জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রশাসনের দাবি, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং তদন্ত চলছে।বিচারের প্রশ্নে অনিশ্চয়তাএই ঘটনায় একদিকে যেমন নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।তবে রাজনৈতিক মহল এবং কিছু বিশ্লেষক এটিকে রাজ্যের প্রশাসনিক দুর্বলতার একটি চিত্র হিসেবে দেখছেন। অনেকের আশঙ্কা, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ।