
“ত্রিপুরা রাজ্যে স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল জালিয়াতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। একাধিক গ্রাহক অভিযোগ জানিয়েছেন যে, স্মার্ট মিটার বসানোর পর হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হচ্ছে। বিষয়টি সামনে আসতেই রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।৮৯,৬৩২টি স্মার্ট মিটার বসানোর পর, সামনে এল চমকপ্রদ তথ্যমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৮৯,৬৩২টি স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র জুলাই মাসেই ৭৯,৬৫৩টি স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে বিল তৈরি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় যে ভুয়া বিলিং বা জালিয়াতির আশঙ্কা রয়েছে, তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।অভিযোগে একাধিক নাম, তদন্তে গঠিত হয়েছে টাস্কফোর্সবিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে গিয়ে বিদ্যুৎ নিগম একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। চার সদস্যের এই টাস্কফোর্সে রয়েছেন:ডিজিএম শিশির দেববর্মাডিজিএম রাজীব কুমার রায়সিনিয়র ম্যানেজার সঞ্জীব নন্দী মজুমদারসিনিয়র ম্যানেজার জহর দেববর্মাএই কমিটির কাজ হবে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা, বিল যাচাই করা এবং দোষীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রিপোর্ট জমা দেওয়া।ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: এক গ্রাহকের বিল ৮২,০০০ টাকা!খোয়াই জেলার লালছড়া এলাকার বাসিন্দা অশোক কান্তি দাস রায়ের অভিজ্ঞতা এই জালিয়াতির মাত্রা স্পষ্ট করে। তিনি অভিযোগ করেন, স্মার্ট মিটার বসানোর পর তার নামে বিদ্যুৎ বিল আসে ৮২,০০০ টাকা। যখন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়, তখন জানা যায় যে, স্মার্ট মিটার বসানোর পরও তার পুরনো মিটারটি চালু ছিল এবং সেই মিটারের পাঠ ব্যবহার করে মিটার রিডার ও সংশ্লিষ্ট একটি গোষ্ঠী ভুয়া বিল তৈরি করছিল।এই ঘটনায় শুধু মিটার রিডারই নয়, গ্রাহকের সঙ্গেও যোগসাজশ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।বহিরাগত সংস্থার বিরুদ্ধে শোকজ, চুক্তিভঙ্গের অভিযোগবিদ্যুৎ নিগমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বহিরাগত সংস্থা TDS Management Consultants Pvt Ltd-এর বিরুদ্ধেও চুক্তিভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শোকজ নোটিশ জারি করা হয়েছে। সংস্থাটি বিল তৈরির জন্য নিয়োজিত ছিল এবং অভিযোগ রয়েছে তারা উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ ছাড়াই বিল তৈরি করছিল।মন্ত্রীর কড়া বার্তা: “কেউ রেহাই পাবে না”মন্ত্রী রতন লাল নাথ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “এই ঘটনাগুলি নিছক বিচ্ছিন্ন নয়, বরং একটি বৃহৎ দুর্নীতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আমরা কেউকেই রেহাই দেব না—সে গ্রাহক হোক বা কর্মকর্তা।” তিনি আরও বলেন, “ত্রিপুরা রাজ্যে বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।”সাধারণ নাগরিকদের জন্য ব্যবস্থা: চালু হলো অভিযোগ গ্রহণের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরসাধারণ গ্রাহকদের যাতে দ্রুত অভিযোগ জানাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করেছে:📱 ৬০৩৩১৩১৯৬৬📱 ৬৮০৯৯৮১২৭৪এই নম্বর দুটিতে শুধুমাত্র স্মার্ট মিটার সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ করা হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।🔍 মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে:৮৯,৬৩২টি স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত।ভুয়া বিলিং, মিটার রিডারের কারচুপি এবং গ্রাহকের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ বিল।টাস্কফোর্স গঠিত, তদন্ত চলছে।বহিরাগত সংস্থাকে শোকজ, চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা।দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস মন্ত্রীর।হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু, জনগণের সহযোগিতা আহ্বান।ত্রিপুরার এই ঘটনায় রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ ও কঠোর অবস্থান জনমনে কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত কতটা দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে শেষ হয়, এবং আসল দোষীরা আদৌ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় কিনা।