অপারেশন সিঁদুর’ থিমে খারচি পুজোর শুভ সূচনা
ত্রিপুরার গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক খারচি পুজো এ বছর এক নতুন মাত্রা পেল ‘অপারেশন সিঁদুর’ থিমের মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার পুরাতন আগরতলায় চতুর্দশ দেবতার মন্দির প্রাঙ্গণে মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা আনুষ্ঠানিকভাবে এই সাতদিনব্যাপী ধর্মীয় উৎসব ও মেলার সূচনা করেন।
দেবতাদের উদ্দেশ্যে পুজো অর্পণ এবং প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী উৎসবের পর্দা তোলে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, বিধায়ক রতন চক্রবর্তী, জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমার এবং পুলিশ সুপার কিরণ কুমার কে সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এই বছর খারচি পুজোর প্রধান আকর্ষণ থিম — ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই থিমে মেলা প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে রঙিন, আবেগঘন ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনায়, যা দর্শনার্থীদের মাঝে সৃষ্টি করেছে এক ভিন্ন উৎসব অনুভূতি। থিমটির মাধ্যমে নারীর শক্তি ও শ্রদ্ধার বার্তা তুলে ধরা হয়েছে বলেই মত আয়োজকদের।
পুজো উদ্বোধনের দিন সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। স্থানীয় শিল্পীদের গানে, নৃত্যে মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দির চত্বর। ত্রিপুরার লোকসংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার মেলবন্ধন ঘটে এই মঞ্চে।
ত্রিপুরার অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় আচার হিসেবে খারচি পুজো ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। আশার মাসে অনুষ্ঠিত এই পুজোর মূল উদ্দেশ্য চতুর্দশ দেবতাদের ‘পাপমুক্ত’ করে পুনঃপবিত্রতা প্রদান। “খারচি” শব্দের অর্থই হল অপবিত্রতার দূরীকরণ, যা গঙ্গাজলে দেবতাদের স্নানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই উৎসব রাজবংশীয় আচার এবং কোকবরক জনজাতির প্রাচীন সংস্কৃতির নিদর্শন।
পুজোর সঙ্গে সঙ্গে গোটা অঞ্চলজুড়ে বসে বিশাল মেলা। স্থানীয় ব্যবসায়ী, হস্তশিল্পী ও খাবারের দোকানদারদের নিয়ে জমজমাট হয়ে ওঠে এলাকা। পুজো মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে ত্রিপুরার লোকজ ঐতিহ্য ও আধুনিক ভাবনার মেলবন্ধন ঘটছে।
উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন গ্রহণ করেছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। বসানো হয়েছে নজরদারি ক্যামেরা, মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মিলনের এই অনন্য উৎসব প্রতিবারই যেমন জনমানসে গভীর প্রভাব ফেলে, তেমনই এবারের থিম ও আয়োজন রাজ্যবাসীর মনে এক নতুন ছাপ রেখে যাবে বলে আশাবাদী আয়োজকরা।
Post Comment