দুই রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা উড়িয়ে শাসকের প্রত্যাবর্তন।*
নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রিয়াংকা বনিক : ২৪ নভেম্বর
লোকসভা ভোটের ছ’মাসের মধ্যে পর পর উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের দুই রাজ্যে রাজনৈতিক আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ফেলল বিজেপি। অক্টোবরে হরিয়ানার পর নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে দুরমুশ করল বিরোধীদের। লোকসভা ভোটে ওই দুই রাজ্যেই বিরোধীদের কাছে ধাক্কা খেয়েছিল তারা। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’র কাছে পর্যুদস্ত নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল।অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে এ বার দুই রাজ্যের বিধানসভা ভোট বা বাংলা-সহ আরও ১৪টি রাজ্যের লোকসভা-বিধানসভা উপনির্বাচনেও ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার’ চিহ্ন দেখা যায়নি। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি-র (শরদ) ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’কে ধরাশায়ী করে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপির (অজিত) জোট ‘মহাজুটি’।
আবার ঝাড়খণ্ডে অঙ্ক কষে জেএমএমে ভাঙন ধরিয়ে চম্পই সোরেনকে দলে টেনে, বিদ্রোহী বাবুলাল মরান্ডিকে ফিরিয়ে এনে, সুদেশ মাহাতোর আজসুর (অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন) সঙ্গে জোট গড়েও সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। কংগ্রেস-আরজেডি-নকশালপন্থীদের সঙ্গে নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রাঁচীর কুর্সি পুনর্দখল করে নতুন নজির গড়েছেন ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের ‘গুরুজি’ শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্ত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দু’রাজ্যেই আসন বেড়েছে শাসকের।ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের রাজধানী দিল্লিতে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্যে (জনসংখ্যার নিরিখে) জয় এবং সার্বিক ভাবে উপনির্বাচনের ফল বিজেপিকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।মহারাষ্ট্রের ভোটে এ বার মহিলাদের সমর্থন ঢেলে এনডিএ দিকে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যা গেরুয়া শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়ের পথ প্রশস্ত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের ‘লাডলি বহিন যোজনা’ সেখানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যে প্রকল্প অনেকটা বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো। ভোটের মুখে মহিলাদের আর্থিক সাহায্যের অঙ্ক ১,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,১০০ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শিন্ডে।দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সরকারের বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিনীতির সমালোচনায় বিজেপি সরব হলেও মহারাষ্ট্রে কিন্তু কেজরীওয়ালের পথে হেঁটে বিদ্যুৎ বিলে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা করেছে তারা। এ ছাড়া, কৃষকদের ভোট পেতে কৃষক সম্মাননিধি যোজনায় ১২ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বিজেপি। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অন্তত ২০ শতাংশ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যা মহারাষ্ট্রের মতো কৃষিপ্রধান রাজ্যে বিজেপিকে সুবিধা দিয়ে থাকতে পারে। যদি ও বা ভোটের আগে পেঁয়াজ রফতানির উপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেও মোদী সরকার হাসি ফুটিয়েছিল কৃষকদের মুখে। এরই পাশাপাশি ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ স্লোগান তুলে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে এককাট্টা করা, বিশেষত ওবিসি ভোটব্যাঙ্ককে অটুট রাখার কৌশল নিয়েছিলেন মোদী-শাহরা। ‘মেরুকরণের’ সেই কৌশলও কাজে দিয়েছে। প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র উদ্ধবের বদলে শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনাকেই বেছে নিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী মরাঠা ভোটারেরা। ভোটের আগে বিরোধী জোটের নেতারা বিশেষত, উদ্ধব এবং শরদ পওয়ার জোটের প্রচার ছেড়ে নিজেদের আসন বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাতে চিড় খায় বিরোধী ঐক্য। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আসনরফা নিয়ে বিরোধী জোটের টানাপড়েনও বিপর্যয়ের অনুঘটক হয়েছে। শরদ-উদ্ধবেরা আশা করেছিলেন ২০২১ সালে বাংলায় নীলবাড়ির লড়াইয়ের মতোই, ‘গদ্দারেরা’ দল ভাঙায় মানুষের সহানুভূতি তাঁদের দিকেই থাকবে। কিন্তু তা হয়নি।ভোটের ফল বলছে, বিজেপির বিরুদ্ধে হেমন্তের তোলা চক্রান্তের অভিযোগই আদিবাসী সমাজে মান্যতা পেয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করেছেন, ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ করেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির সাহায্যে শিবুপুত্র হেমন্তকে দুর্নীতি মামলায় ‘ফাঁসিয়েছে’ মোদীর সরকার। পাশাপাশি, চম্পইয়ের বিরুদ্ধে জেএমএমের দেওয়া ‘গদ্দার’ তকমা বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়ে গিয়েছে। মোদীর তোলা ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ স্লোগানেও সাড়া দেননি ঝাড়খণ্ডবাসী।
Post Comment