২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বে ফের শুরু হয়েছে এক পুরোনো আলোচনা — বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী। যিনি মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরেও আলোচনায় আছেন তাঁর অদ্ভুত ভবিষ্যদ্বাণীগুলির জন্য।
১৯১১ সালে বুলগেরিয়ায় জন্ম নেওয়া ভ্যাঙ্গেলিয়া পান্দেভা দিমিত্রোভা, যিনি পরবর্তীতে পরিচিত হন বাবা ভাঙ্গা নামে। ১২ বছর বয়সে ভয়াবহ এক ঝড়ে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। কিন্তু সেই অন্ধত্বই নাকি তার মধ্যে জন্ম দেয় অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার। আশেপাশের মানুষ বিশ্বাস করত — তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পান, এমনকি মানুষের জীবন ও মৃত্যুর ঘটনাও আগাম জানাতে পারতেন।বাবা ভাঙ্গা সারাজীবনই সরল জীবনযাপন করেছেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি মুখে বলা হতো, অনুগামীরা পরে সেগুলো লিখে রাখত। এই কারণেই অনেক বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে — আসলটা কোনটি, পরে সংযোজন হয়েছে কোনটি, তা স্পষ্ট নয়। তবুও, ইতিহাস বলছে, তাঁর বলা অনেক কথাই বিস্ময়করভাবে মিলে গেছে।
২০২৫ সালের জন্য বাবা ভাঙ্গা যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার কিছু অংশ বাস্তবের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন তাঁর অনুসারীরা।বিশ্বজুড়ে অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তন, মেঘভাঙা বৃষ্টি, দাবানল ও অগ্নুৎপাত — সবই তাঁর কথার প্রতিফলন বলে অনেকেই মনে করছেন।তিনি আরও বলেছিলেন, এই সময় পৃথিবী অর্থনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়বে এবং কিছু দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।বাস্তবেও ২০২৫ সালের শেষ ভাগে বিশ্বের বহু দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, জ্বালানির দাম অস্থির, আবার জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোটি মানুষ। এসব ঘটনাই ফের মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছে বাবা ভাঙ্গার সেই ভবিষ্যদ্বাণী।
তিনি নাকি বলেছিলেন, “বিশ্ব দুটি ভাগে বিভক্ত হবে, আগুনে ও ধ্বংসে ভরে উঠবে আকাশ।”এই বক্তব্যকে ঘিরেই আজ সবচেয়ে বেশি আলোচনা। তাঁর অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, ২০২৬ সালের মধ্যেই একটি বৃহৎ যুদ্ধ শুরু হবে, যা প্রথমে সীমিত আকারে থাকবে কিন্তু পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বে।এই যুদ্ধের প্রভাবে —অর্থনৈতিক মন্দা ছড়িয়ে পড়বে, অনেক দেশের মুদ্রার মান পড়বে,সোনার দাম বিপুল হারে বাড়বে, এবং খাদ্য সংকট দেখা দেবে বিশ্বজুড়ে।তিনি আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্বকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।—
২০২৬ সাল শুরু হতে এখন মাত্র দু’মাস বাকি। কিন্তু এর মধ্যেই বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখনও চলমান, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত তীব্র, আর এশিয়ায় চীন, ভারত ও আমেরিকার প্রভাব প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে।এই সবকিছু মিলিয়ে অনেকে মনে করছেন — হয়তো বাবা ভাঙ্গার কথাই সত্যি হতে চলেছে।অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও উদ্বেগের কারণ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। স্টক মার্কেট অস্থির, সোনার দাম ইতিহাসে অন্যতম উচ্চতায়।বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২৬ সাল হবে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছরগুলির একটি — যা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তবে সমালোচকরা এই সব ভবিষ্যদ্বাণীকে “অস্পষ্ট ও প্রতীকী” বলে মনে করেন।তাঁদের দাবি — তাঁর অনেক বক্তব্যই সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হয়, প্রকৃতপক্ষে সেগুলি এতটাই সাধারণ যে যেকোনো সময়ের ঘটনাকেই তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায়।তবুও, ইতিহাসে দেখা গেছে — ৯/১১ হামলা, সুনামি, এমনকি মহামারির ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছিলেন বলে অনেকে দাবি করেছেন।
ফলে বিশ্বাসীরা মনে করেন, যেহেতু এত কিছু মিলেছে, তাই ২০২৬ সালের যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণীও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।—ভয় না, প্রস্তুতির সময় বিশ্ব যখন এমন অনিশ্চিত সময়ের মুখে দাঁড়িয়ে, তখন বাবা ভাঙ্গার এই ভবিষ্যদ্বাণী মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করলেও, অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন — ভয় নয়, বরং সতর্ক থাকা উচিত।যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হুমকি থাকলে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জলবায়ু সচেতনতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতি রক্ষা — এই বিষয়গুলিতেই এখন গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
বাবা ভাঙ্গা হয়তো অতীতের এক রহস্যময় চরিত্র, কিন্তু তাঁর কথাগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় — মানবসভ্যতা এখন এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আমরা চাইলে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে ভয় হিসেবে নয়, বরং সতর্ক সংকেত হিসেবে নিতে পারি — যাতে ধ্বংস নয়, ভবিষ্যতের জন্য গড়ে ওঠে এক নতুন ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্ব।
বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীগুলি রহস্যময়, বিতর্কিত, তবে প্রাসঙ্গিক।২০২৬ সাল আসছে — তার সঙ্গে আসছে নতুন আশা, কিন্তু পাশাপাশি অজানার ভয়ও।সময়ই বলবে, তার বলা “আগুনে ভরা আকাশ” শুধুই কল্পনা ছিল, নাকি মানবসভ্যতার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছে।