সোনামুড়া মধুবন এলাকার এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সম্প্রতি দেখা দিয়েছে এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি। অভিযোগ, কেন্দ্রের নিযুক্ত হেল্পার সুমিতা আচার্যী নিয়মিত কাজে না আসলেও মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রের দিদিমনি একাই সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন—শিক্ষাদান থেকে শুরু করে শিশুদের জন্য খাবার রান্না পর্যন্ত।
স্থানীয়দের দাবি, সুমিতা দেবী শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁর রাজনৈতিক যোগাযোগই তাঁকে এই সুবিধা এনে দিয়েছে। এলাকার এক বাসিন্দা জানান, “দিদিমনি দিনরাত পরিশ্রম করছেন, অথচ যিনি হেল্পার হিসেবে নিয়োজিত, তাঁকে কখনো দেখা যায় না। প্রশ্ন করলে তিনি রাজনৈতিক প্রভাবের দোহাই দিয়ে হুমকি দেন।”
এই অনিয়মের কারণে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, দিদিমনি একাই শিশুদের শিক্ষাদান, পরিচর্যা, ও রান্নার সমস্ত কাজ সামলাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। অনেক সময় দিদিমনি অসুস্থ থাকলেও কেন্দ্র বন্ধ না রাখতে তিনি পরিবারের সদস্য বা এলাকার মহিলাদের সাহায্যে খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করেন।
অন্যদিকে, সুমিতা আচার্যীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বছরের পর বছর অনুপস্থিত থেকেও প্রশাসনের কোনো বাধা ছাড়াই বেতন তুলে নিচ্ছেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যায় প্রশাসনের গাফিলতি ও রাজনৈতিক প্রভাব কতটা গভীরে গেঁথে আছে।
একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই উদাসীনতা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষক যদি রান্নাঘরে সময় কাটান, তাহলে পড়াশোনা হবে কীভাবে?”
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। তাঁদের বক্তব্য, “অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা ও পুষ্টির ভিত্তি। এখানে যদি এইভাবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনিয়ম চলে, তাহলে সমাজের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে।”
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্তা জানান, “অভিযোগের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা খতিয়ে দেখছি, প্রয়োজনে তদন্ত শুরু হবে।” তবে এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত ব্যবস্থা বা স্থগিতাদেশের খবর পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনাটি শুধু একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নয়—এটি আমাদের প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও নৈতিকতার প্রতিফলন। প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেই কি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার লাইসেন্স মেলে?
এলাকাবাসীর আশা, দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নিষ্ঠাবান দিদিমনির মতো কর্মীদের ন্যায্য সম্মান ও সহায়তা প্রদান করা হবে। তাঁরা চান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আবার শিশুদের হাসি-খুশি শিক্ষার আসরে পরিণত হোক—যেখানে পরিশ্রমী কর্মীরা প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন, আর অনিয়মের ঠাঁই হবে না।