
ত্রিপুরায় রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন মাত্রা নিচ্ছে। রাজ্যের এক যুব কংগ্রেস নেতার পরিবারকে ফেসবুক লাইভে সরকারের সমালোচনার ‘মূল্য’ দিতে হয়েছে জেল খেটে। অথচ, তাঁদের বাড়িতে হামলার অভিযোগে থাকা ব্যক্তিরা এখনও অধরা।গত ৮ই জুন মধ্যরাতে, আগরতলার পূর্ব থানার পুলিশ গ্রেফতার করে যুব কংগ্রেস নেতা শাহজাহান ইসলামের বাবা নজরুল ইসলাম ও দাদা খাইরুল ইসলামকে। অভিযোগ—তাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রত্যক্ষ অপরাধ প্রমাণিত না হলেও, শাহজাহানের সামাজিক মাধ্যমে সরকার-বিরোধী মন্তব্যের জেরে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।ফেসবুক লাইভ এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াশাহজাহান ইসলামের ফেসবুক লাইভে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা এবং পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়। বিজেপির দাবি, ভিডিওটিতে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার হয়েছে। এরপরেই তাঁর পরিবারের ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।শাহজাহানের পরিবারের দাবি, ওই ফেসবুক লাইভের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একদল দুষ্কৃতী, যারা বিজেপির যুব মোর্চা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ি ভাঙচুর, প্রাণনাশের হুমকি এবং গুলি চালানোর হুমকির অভিযোগ উঠেছে।পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নবিষয়টি আরও জটিল হয় যখন দেখা যায়, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিয়ে, পুলিশ গ্রেফতার করে শাহজাহানের পরিবারকেই। এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সভাপতি আশীষ সাহা ও বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও হিমশিম খায় বলে সূত্রের খবর।জামিনে মুক্তি, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়প্রায় এক মাস তিন দিন কারাবাসের পর সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান নজরুল ইসলাম ও খাইরুল ইসলাম। তবে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষদের একাংশের প্রশ্ন—যাঁরা হামলায় জড়িত, তাঁদের এখনও কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না?গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগত্রিপুরার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধী দলগুলি। তাঁদের বক্তব্য—মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যদি এমনভাবে দমন করা হয়, তবে তা গণতন্ত্রের চরম অবমাননা। সাধারণ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনা করলে যদি পরিবার সহ হেনস্থা ও জেলে যেতে হয়, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।শেষ কথাত্রিপুরা এখন এক অনিশ্চয়তা ও ভয়ের আবহে। সেখানে কথার জবাবে এলে সহিংসতা, আর আইনের বদলে যদি পক্ষপাত হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই—রাজ্যে আদৌ কি আইনের শাসন আছে?