ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ভারত: প্রশ্ন এখন ‘কখন’, ‘যদি’ নয়
ভারতের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান একাধিক সক্রিয় ফল্ট লাইনের উপর, যার ফলে প্রায় ৫৯ শতাংশ এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানী দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, উত্তরাখণ্ড, বিহার ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল — এই এলাকাগুলি বিশেষত জোন ৪ ও ৫-এ পড়ে, যা সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে পড়ে।এইসব অঞ্চলে কয়েক কোটি মানুষ বসবাস করছেন। অথচ বাস্তব চিত্র বলছে, ভারতের অধিকাংশ ভবন এখনো ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নয়। হাসপাতাল, স্কুল, উড়ালপুল বা ব্রিজ—বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে দুর্বল নকশা ও নিম্নমানের উপকরণে। এমন পরিস্থিতিতে একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে প্রাণহানি ও সম্পদহানির ভয়াবহতা কল্পনাতীত।ভূতাত্ত্বিক ড. হর্ষ গুপ্তা বলেন, “আমরা জানি, বিপদ আসবে—কিন্তু তার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, তা এখনো আমরা নিচ্ছি না। জাপানে যেমন বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে প্রয়োগ হয়, আমাদের দেশে তেমন সচেতনতা ও নিয়ম মানা হয় না।”বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বিল্ডিং কোড মানা নয়, জনসচেতনতা ও দুর্যোগ প্রশিক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে এখনই। তাদের প্রস্তাব:প্রতিটি স্কুলে ভূমিকম্প প্রশিক্ষণ ও মহড়া বাধ্যতামূলক করা হোকপ্রতিটি পরিবারে রাখা হোক ভূমিকম্প জরুরি কিট (জল, টর্চ, ওষুধ, খাবার, পরিচয়পত্র)স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি চালানো হোকপুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ করা হোক কঠোরভাবেজাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (NDMA) ভূমিকম্প নিয়ে কিছু গাইডলাইন প্রকাশ করলেও, তা বাস্তবে প্রয়োগ খুব সীমিত। অনেক সময়ই দেখা যায়, নির্মাণ সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন এই নির্দেশনাগুলিকে উপেক্ষা করে থাকে।তবে আশার কথা, ধীরে ধীরে নাগরিকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ছে। অনেক আবাসিক সমিতি এখন ভূমিকম্প মহড়া আয়োজন করছে, নিরাপত্তা নির্দেশিকা ভাগ করে নিচ্ছে সদস্যদের সঙ্গে।কিন্তু এতেই কি হবে?বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা ভালো, কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া বড়সড় পরিবর্তন সম্ভব নয়। একটি মাত্র ৭.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্পই যদি ঘটে যায় মেট্রোপলিটন শহরের কোথাও, তাহলে তার ফল হতে পারে কয়েক লাখ প্রাণহানি ও হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি।সুতরাং প্রশ্ন এখন আর ‘যদি’ নয়—প্রশ্ন এখন, ‘কখন’?প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। সরকার, প্রশাসন ও জনগণ—সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই বিপদ এড়ানো অসম্ভব।
Post Comment