ত্রিপুরার খোয়াই জেলার পূর্ব আর.সি. ঘাট গ্রামের তরুণ ও উদ্যমী কৃষক শ্রী হিরালাল দাস আজ গ্রামের অনুপ্রেরণার প্রতীক। সমাজসেবার প্রতি গভীর আগ্রহ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের জীবন নয়, গ্রামের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নেরও এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
প্রথমদিকে হিরালাল দাস ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে ২.৪ একর জমিতে খরিফ মৌসুমে ধান চাষ এবং ০.৮ একর জমিতে রবি মৌসুমে আলু চাষ করতেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার না করায় তার উৎপাদন ছিল সীমিত — মাত্র ২৬.৮ কুইন্টাল। এছাড়া তিনি ৬টি দেশি জাতের গরু, কিছু হাঁস ও ছাগল পালন করতেন এবং ০.১ একর পুকুর থেকে প্রায় ৪,০০০ টাকা আয় করতেন। সেই সময় তার বার্ষিক মোট আয় ছিল মাত্র ৭৬,৬৫৩ টাকা।
২০১৯-২০ সালের পর খোয়াই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র এর সহযোগিতায় হিরালাল দাসের জীবনে আসে পরিবর্তন। KVK-এর পরামর্শে তিনি মাটির স্বাস্থ্য কার্ড ব্যবহার শুরু করেন, যার ফলে সার ও অন্যান্য ইনপুটের ব্যবহার কমে যায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে তিনি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ করেন এবং ফসল বৈচিত্র্য বাড়ান।
তিনি এখন ১.২ একর জমিতে ট্রু পটেটো সিড চাষ করে বছরে প্রায় ৮৭,১৯৫ টাকা আয় করছেন। ধানের পরিবর্তে এখন তিনি ধান বীজ উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছেন — গোমতী, ত্রিপুরা চিকন ও ত্রিপুরা নিরোগ জাতের বীজ উৎপাদন করছেন ICAR ত্রিপুরা সেন্টার ও KVK খোয়াই-এর সহযোগিতায়।
এছাড়া ০.৪ একর জমিতে মেচিং কুমড়া (spine gourd) চাষ করে তিনি বছরে ৩৩,৪২০ টাকা এবং একই পরিমাণ জমিতে আগাম বাঁধাকপি চাষ করে ২৫,৩২০ টাকা আয় করছেন। আগাম ফসল বাজারে এনে তিনি প্রতি কেজি বাঁধাকপি ২৪ টাকায় বিক্রি করেছেন, যা সাধারণত ১২-১৫ টাকায় বিক্রি হয়।
হিরালাল দাসের খামারে এখন ১১০টি খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস রয়েছে, যারা বছরে প্রায় ৬,০০০টি ডিম উৎপাদন করছে। পাশাপাশি, তিনি গরুর গোবর ও ফসলের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করে জৈব সার (ভেরমি কম্পোস্ট) তৈরি করছেন, যা নিজের খামারে ব্যবহার করার পাশাপাশি কেঁচো বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ও দিচ্ছে।
KVK-এর বৈজ্ঞানিক সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা (Integrated Farming System) গ্রহণের ফলে তার বার্ষিক আয় ৭৬,৬৫৩ টাকা থেকে বেড়ে ২,৮১,৪৫৭ টাকায় পৌঁছেছে — মাত্র ছয় বছরে আয়ের বৃদ্ধি হয়েছে ২৬৭.১৮%।
আজ হিরালাল দাসের নেতৃত্বে পূর্ব রামচন্দ্র ঘাট গ্রামে গঠিত “Soil Health Scout Team” কৃষকদের দরজায় মাটির স্বাস্থ্য কার্ড পৌঁছে দিচ্ছে। তার এই উদ্যোগ কেবল কৃষি উৎপাদন বাড়াচ্ছে না, টেকসই কৃষির ধারণাকেও ছড়িয়ে দিচ্ছে।