আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাংলাদেশ–ভারত কূটনীতিতে। রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার নয়াদিল্লিকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়—হাসিনাকে অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার। তাদের যুক্তি, হাসিনা বর্তমানে ভারতেই অবস্থান করছেন এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক দ্রুত একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেয়। তাতে বলা হয়—ভারত রায়টি “সরকারিভাবে নথিভুক্ত” করেছে এবং বাংলাদেশের মানুষের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা তাদের কাছে অগ্রাধিকার। নয়াদিল্লি জানায়, তারা “সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবে”—যার অর্থ স্পষ্টভাবে প্রত্যর্পণের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো প্রতিশ্রুতি নয়।
কূটনীতিকরা বলছেন, ভারতের এই অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে তারা পরিস্থিতি আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায়। কারণ যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, তা দুই দেশের সম্পর্ক—বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতায়—গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
ঢাকা জানিয়েছে, শেখ হাসিনা “মানবতাবিরোধী অপরাধে” দোষী সাব্যস্ত। সরকার স্পষ্টভাবে বলেছে—যদি কোনও দেশ তাঁকে আশ্রয় দেয়, তা হবে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি অমর্যাদা এবং অ-মৈত্রিক আচরণ।
তবে সমালোচকদের মতে, এই বার্তার বড় অংশই দেশীয় রাজনীতির উদ্দেশ্যে—যাতে সরকার দেখাতে পারে তারা কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
ভারত–বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি (২০১৩) অনুযায়ী, যদি কোনও অনুরোধ “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে মনে হয়, ভারত তা ফেরত দিতে পারে। হাসিনার দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলো “রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত”—যা দিল্লির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ভিত্তি তৈরি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধারা ভারতকে যথেষ্ট আইনি নমনীয়তা দেয়, যা ব্যবহার করে তারা প্রত্যর্পণ এড়াতে পারে।
- হাসিনার প্রত্যর্পণ বাংলাদেশ সরকারকে সন্তুষ্ট করতে পারে, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের রাজনৈতিক বার্তা পাল্টে দিতে পারে।
- আবার প্রত্যর্পণ না করলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক সাময়িকভাবে উত্তপ্ত হতে পারে।
সাউথ ব্লক সূত্র জানায়, ভারত আপাতত কোনো তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেবে না। পরিবর্তে, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ স্থিতিশীল হয় কিনা—তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ও প্রত্যর্পণ দাবি দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে নতুন এক উত্তেজনার সূত্রপাত করেছে। নয়াদিল্লির সতর্ক অবস্থান ইঙ্গিত দেয়—ভারত আদালতের রায়ের চেয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহকে তাই দুই দেশের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।