×

নেশামুক্ত ত্রিপুরার পথে আরও এক ধাপ – আন্তর্জাতিক ড্রাগস বিরোধী দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা

নেশামুক্ত ত্রিপুরার পথে আরও এক ধাপ – আন্তর্জাতিক ড্রাগস বিরোধী দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা

ত্রিপুরা যেন মাদকের করিডোর না হয়ে ওঠে—এই সংকল্প নিয়েই এগোচ্ছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে দেশের অন্যান্য প্রান্তে মাদক পাচারকারীরা ত্রিপুরাকে ব্যবহার করছে, তা রুখতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। আজ আগরতলায় অনুষ্ঠিত ড্রাগস বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা।সচেতনতা গড়ে তুলতে জনসম্পৃক্ত উদ্যোগউমাকান্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ময়দানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয় মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে পতাকা নেড়ে বাইক র‍্যালি এবং পদযাত্রার মাধ্যমে। জনসম্পৃক্ত এই অভিযানে ছাত্রছাত্রী, পুলিশ কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাধারণ মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে এক রক্তদান শিবিরও আয়োজিত হয়, যা ড্রাগস বিরোধী লড়াইয়ে স্বাস্থ্য-সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধকে প্রতিফলিত করে।“নো টু ড্রাগস” কর্মসূচি চালিয়ে যেতে আহ্বানবক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজকের সমাজে ড্রাগস শুধু একটি সমস্যা নয়, এটি আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। একে রুখতে হলে কেবল সরকার নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরকে এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “ড্রাগসের অপব্যবহারের সঙ্গে এইচআইভি/এইডস-এর বিস্তারের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সচেতনতা ছাড়া আমরা একে রুখতে পারব না।”তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, “বাড়িতে সন্তানদের প্রতি নজর রাখুন। তাদের মনের কথা শুনুন। আজকের তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে—তাদের রক্ষা করতে আমরা সবাই দায়বদ্ধ।”প্রযুক্তি ও প্রশাসনের যুগ্ম উদ্যোগে যুদ্ধঅনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, “মাদক বিরোধী লড়াইয়ে রাজ্য সরকার একটি হেল্পলাইন নম্বর (১৯৩৩) চালু করেছে এবং QR কোড-এর মাধ্যমে সরাসরি তথ্য জানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।” এই হেল্পলাইন এবং প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার একটি কার্যকরী মাধ্যম হতে চলেছে।ডিজিপি অনুরাগ বলেন, “গত কয়েক বছরে রাজ্যে মাদকবিরোধী অভিযানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। এবছর রাজ্যব্যাপী অভিযানে ৮.৫ লক্ষ গাঁজা গাছ ধ্বংস করা হয়েছে—যা একটি রেকর্ড। আরও বড় চক্র ভাঙার লক্ষ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও একসাথে কাজ করছে।”বিশিষ্টদের উপস্থিতি ও সম্মিলিত উদ্যোগঅনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন:রমেশ রেডি, এনটিএফ-এর ত্রিপুরা প্রধানঅভিষেক সিং, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিবপ্রকাশ রঞ্জন মিশ্র, নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর অতিরিক্ত অধিকর্তাডা. বিশাল কুমার, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসকডা. কিরণ কুমার কে, পুলিশ সুপারঅনুষ্ঠানটি ছিল পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন ও নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো, আগরতলা জোনাল ইউনিটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত।ভবিষ্যতের দিকে নজরঅনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “শুধু একদিনের কর্মসূচি নয়, সারা বছর ধরে সচেতনতা, শিক্ষা এবং আইনি পদক্ষেপ—এই তিনকে মিশিয়ে আমরা ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত করে তুলতে চাই। স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বাড়ানো হবে। পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”ত্রিপুরা সরকারের এই উদ্যোগ এখন শুধু একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়—এটি একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে। আর সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, পুলিশ, এবং সর্বোপরি রাজ্যের প্রতিটি সচেতন নাগরিক।

Post Comment

You May Have Missed