আগরতলা, ৩ নভেম্বর: ত্রিপুরা হাইকোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে রাজ্যের আলোচিত ‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’ রেস্টুরেন্ট কাম বারের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে। সোমবার বিচারপতি টি. অমরনাথ গৌড়ের একক বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, কালেক্টর অফ এক্সসাইজের জারিকৃত লাইসেন্স বাতিলের আদেশ আইনসম্মত ছিল না। এর ফলে রেস্টুরেন্টটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরা রাজ্যের কালেক্টর অফ এক্সসাইজ ‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’ রেস্টুরেন্ট কাম বারের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দেন। এর ফলে রেস্টুরেন্টের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ত্রিপুরা হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করে। মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ৩০ ও ৩১ অক্টোবর।
রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী অরজিত ভৌমিক। তিনি যুক্তি দেন, কালেক্টর অফ এক্সসাইজের আদেশে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি রয়েছে এবং তা যথাযথ আইনি ভিত্তি ছাড়াই জারি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে পারেনি যার ভিত্তিতে রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে পর্যবেক্ষণ করে যে, রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতার নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে। রায়ে বলা হয়, কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার মতো গুরুতর পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে যথাযথ শুনানির সুযোগ দেওয়া আবশ্যক। এই মৌলিক নীতির ব্যত্যয় ঘটায় কালেক্টর অফ এক্সসাইজের সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে আদালত।
ফলে ‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’ রেস্টুরেন্ট কাম বার পুনরায় চালু করার অনুমতি প্রদান করে হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে প্রতিষ্ঠানটি তার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
এই রায়কে ঘিরে রাজ্যের ব্যবসায়িক মহলে স্বস্তির হাওয়া বইছে। বহু উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িক সংগঠন আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ব্যবসায়িক ন্যায্যতার জন্য এক ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও আইনি প্রক্রিয়ার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
আইনজীবী অরজিত ভৌমিক রায়ের পর সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমরা শুরু থেকেই বিশ্বাস করতাম যে আমাদের ক্লায়েন্টের সঙ্গে অবিচার হয়েছে। আদালত আজ সেই সত্যিটিই প্রতিষ্ঠা করেছে। এই রায় শুধু ‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’-এর জন্য নয়, রাজ্যের অন্যান্য উদ্যোক্তাদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।”
ত্রিপুরা হাইকোর্টের এই রায়ে আবারও প্রমাণিত হলো যে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ওপর আদালতের তত্ত্বাবধান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। ‘হ্যাপিয়েস্ট আওয়ার’ রেস্টুরেন্ট কাম বারের পুনরায় কার্যক্রম শুরু এখন কেবল আইনি জয়ের প্রতীক নয়, বরং ব্যবসায়িক ন্যায়বিচারেরও এক উজ্জ্বল উদাহরণ।