স্বনির্ভর ত্রিপুরা গঠনের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করছে। আজ তুলাশিখর কৃষি উপ-বিভাগে একটি প্রাথমিক গ্রামীণ বাজারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ। অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ত্রিপুরার প্রতিটি ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য পৃথক বাজার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক গ্রামীণ বাজারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, কৃষিক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়া মানেই ত্রিপুরাকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি জানান, এই ৬০টি বাজার নির্মাণে মোট ১৬০ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে।মন্ত্রী বলেন, মানুষের জীবনের প্রথম প্রয়োজন খাদ্য, এরপর আসে জল, বাসস্থান, বস্ত্র ও শিক্ষা। তাই ভারতের মূল ভিত্তি কৃষি। তিনি আরও যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন হলো ভারতকে আধুনিক ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের শস্যভাণ্ডার হিসেবে গড়ে তোলা।
রতন লাল নাথ বলেন, ভারতের সামগ্রিক উন্নয়ন কৃষির উন্নয়ন ছাড়া অসম্পূর্ণ। ত্রিপুরার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিনির্ভর। তাই কৃষিতে স্বনির্ভরতা মানেই রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়া।
মন্ত্রী জানান, রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। এর পাশাপাশি সরকার বাজার অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন বাজারগুলোতে থাকবে শীতল সংরক্ষণাগার, কৃষি তথ্যকেন্দ্র, ওজন মেশিন এবং আধুনিক দোকানঘর।মন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যকে স্বনির্ভর করতে হলে কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন অপরিহার্য। এ কারণেই সরকার প্রাথমিক গ্রামীণ বাজার ও কৃষি নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলোর উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।
রাজ্যে কৃষিক্ষেত্রে চালু হয়েছে জৈব চাষ, ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মতো আধুনিক উদ্যোগ। এসব প্রকল্প কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, রাজ্যের কৃষি বাজার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। ভবিষ্যতে প্রাথমিক বাজারগুলোর পাশাপাশি অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইউনিট স্থাপন করা হবে, যাতে কৃষকরা প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন করে আরও বেশি লাভবান হতে পারেন।ত্রিপুরা রাজ্যে এখন চাষযোগ্য জমির চিহ্নিতকরণ, জলসংরক্ষণ প্রকল্প এবং কৃষকদের ডিজিটাল নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে চলছে। সরকারের প্রত্যাশা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ত্রিপুরা নিজস্ব খাদ্যশস্যে সম্পূর্ণ স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।
অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে শুধু কৃষক নয়, স্থানীয় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও পরিবহন ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে বলে আশা করছে সরকার।
অনুষ্ঠানের শেষে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই — কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো। কারণ কৃষক হাসলে দেশ হাসে।”
ত্রিপুরা সরকার বিশ্বাস করে, উন্নত বাজার অবকাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষকদের স্বনির্ভরতা — এই তিন স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে রাজ্য এগিয়ে যাবে এক নতুন কৃষি যুগে।